Wednesday 19 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সহিংসতার শিকার নারীদের ৯২ শতাংশ থাকছেন আইনের বাইরে!

ফারহানা নীলা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ মার্চ ২০২৫ ২২:২৯ | আপডেট: ৮ মার্চ ২০২৫ ১৬:০১

ঢাকা: সামাজিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন ধারায় নারী কোনো অংশেই পুরুষের পেছনে ছিল না, ইতিহাস তার সাক্ষী। ফ্রান্সের প্যারি কমিউন, ফরাসি বিপ্লব, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক আন্দোলনসহ ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। সবখানেই পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ সমানতালে না হলেও, ছিল চোখে পড়ার মতো।

তবে পরিতাপের বিষয়, অধিকারের জায়গায় এখনো নারীরা বঞ্চিত। এমনকি নিজ গৃহেই নির্যাতিত হচ্ছেন নারীরা। যা দেশের জন্য দুঃখজনক। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘নারীরা এখনো তাদের কণ্ঠ সোচ্চার করছেন না। এমনকি নির্যাতিত হলেও আইনের মুখোমুখি হচ্ছেন না।’

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি, বাংলাদেশ ব্যুরোর দেওয়া এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী আইনের আশ্রয় নেন। বাকি ৯২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন না। এ ছাড়া সহিংসতার শিকার ৬৪ শতাংশ নারী তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করেন না।

কিন্তু কেনো নারীরা নীরবে মুখ বুঝে মেনে নিচ্ছে এসব সহিংসতা?

এসব সহিংসতা নীরবে মেনে নেওয়ার পেছনে অনেকাংশে নারীরাই দায়ী। একদিকে যেমন তাদের সাহসিকতার অভাব ও অজ্ঞতা, তেমনি আছে অর্থনৈতিক সংকট— বিশেজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন।

সাহসিকতার অভাব

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছি আমরা। কিন্তু অনেক নারীই মুখ খুলতে চান না। ধর্মান্ধতা, সামাজিকতা ও পারিবারিক কারণে আইনের আশ্রয়ে নিতে পারেন না অনেকে। কেউ আবার পরিবারের সদস্যদের ভয়ে মুখ খুলেন না। অনেকে স্বামীর কাছে নির্যাতিত হয়ে তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যেতে চান না। অনেকে সামাজিকতার জায়গা থেকে, বিশেষ করে গ্রামের দিকের নারীরা এলাকার মুরুব্বীদের জন্য ভয়ে মুখ খুলেন না। এই বিষয়গুলোর ফলে নির্যাতিত নারীরা নির্যাতনেই থাকছে। আর নির্যাতন করা পুরুষটি নির্যাতন করেই চলছে। নারী যদি সাহস না দেখায়, মুখ না খুলে, তাহলে তো আমরা চাইলেও কিছু করতে পারব না।’

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির

জানার অভাব বা অজ্ঞতা

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সিউতি সবুরের মতে, ‘এখনো অনেক ‘নারী আইন’ কী? সেই আইনে কী আছে, সেই বিষয়ে কিছুই জানে না। এতো গেল শিক্ষিত নারীদের কথা। একটু যদি গ্রামীণ বা নিরক্ষর নারীদের কথা বলি, তারা আইন কী সেটাই বুঝেন না। কিছু নারী আছে, নিজ এলাকার পুলিশের কাছে হয়তো চলে যায়, সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, আদালত বা আইনের মুখোমুখি না করে, নিজেদের মধ্যে সমঝোতার খাতিরে তাদের সমাধানটা করে দেওয়া হয়। তাই আমাদের একদম তৃনমূলে গিয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামীণ নারীদের কাছে যেতে হবে। নারীদের শিক্ষিত করতে হবে। তা-না হলে নারীরা নির্যাতিত হবেই। আইন থাকবে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ হবে না।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সিউতি সবুর

অর্থনৈতিক কারণ

বাংলাদেশের মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মুসলিম বলেন, ‘একটা মামলা চালাতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। এই অর্থনৈতিক সাপোর্ট না পাওয়ার কারণে নারীরা সরে যেতে বাধ্য হয়। তাকে তার পরিবারও অর্থ দেন না। আর যদি সে কর্মজীবী নারী না হয়, তাহলে তো আরও তার পক্ষে মামলা চালানো সম্ভব হয় না। আমরা কিছু নারীর মামলা নিজেরাই চালাই। কিন্তু সেটা ক্ষেত্র বিশেষে। তো এই অর্থনৈতিক কারণটা একটি বড় বিষয়।’

বাংলাদেশের মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মুসলিম

 

মামলার জটিলতা এবং দীর্ঘসময়

নারী পক্ষের সদস্য জাহানারা খাতুন বলেন, ‘কোনো নারী আইনের সম্মুখীন যদি হয় সাহস করে দাঁড়ায়ও, একটা সময় সে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। কারণ মামলার জটিলতা। একটি মামলা দিনের পর দিন মাসের পর মাস ঘুরছে। প্রতিমাসে একটি করে ডেট দিচ্ছে। কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। অর্থাৎ দীর্ঘসময় লেগে যাচ্ছে। ওই নারীর পক্ষে প্রতি মাসে কোর্টে ন্যায় বিচার চাওয়ার জন্য হাজির হওয়া সম্ভব হয় না। আবার অর্থনৈতিক বিষয়টা তো থাকছেই। এই মামলা জটিলতার কারণেই সাহস করে এগোচ্ছেন না নারীরা।’

নারী পক্ষের সদস্য জাহানারা খাতুন

এই বিশেষজ্ঞদের মতে, নীরবতা কোনো সমাধান নয়। হতে হবে সাহসী। কণ্ঠ তুলতে হবে, আওয়াজ তুলতে হবে। নিজের স্বাধীনতা নিজেই রক্ষা করে চলতে হবে। কণ্টকপূর্ণ পথটাকে নিজ উদ্যোগেই সারিয়ে তুলতে হবে নারীদের।

সারাবাংলা/এফএন/এইচআই
বিজ্ঞাপন

আরো

ফারহানা নীলা - আরো পড়ুন