রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় থাকবে না— আইএসপিএবি’র হুঁশিয়ারি
৮ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫৪ | আপডেট: ৮ মার্চ ২০২৫ ১৭:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মোবাইল অপারেটরদের হাতে ‘ফিক্সড ব্রডব্যান্ড’ গেলে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের থানাভিত্তিক লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।
টেলিকমখাতে প্রস্তাবিত সংস্কারে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান এবং দেশীয় ব্রডব্যান্ড আইএসপির লাইসেন্সিং নীতিমালা পরিবর্তনের চেষ্টার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উত্থাপিত তিন দফা দাবি হচ্ছে- ফিক্সড ব্রডব্যান্ড লাইসেন্স শুধুমাত্র দেশীয় আইসপিগুলোর জন্য সংরক্ষিত রাখা, মোবাইল অপারেটরদের শুধুমাত্র তাদের নির্ধারিত সার্ভিস লাইসেন্সের আওতায় কাজ করতে বাধ্য করা এবং বর্তমান আইএসপি লাইসেন্সিং নীতি অপরিবর্তিত রাখা ও কোনো নতুন ফি বা কাঠামো পরিবর্তন না করা।
সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক রাজিব শাহরিয়ার রুবেন্স বলেন, ‘বিটিআরসি একটি ড্রাফট প্রকাশ করেছে। এটা একেবারে ইনিশিয়াল স্টেইজে আছে। তবে এই ড্রাফট নিয়ে আমরা যে শঙ্কিত, সেটা যদি আমরা জানাতে না পারি, তাহলে এই প্রস্তাবনা পাশও হয়ে যেতে পারে। সেজন্য আমরা আজ (শনিবার) সংবাদ সম্মেলনে এসেছি। গত ৫ মার্চ বিটিআরসির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে একটা পালটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যে দাবিগুলো আমরা এখানে বললাম, সেই দাবিগুলো ওখানেও উল্লেখ আছে।’
‘আমরা আশা করছি, বিটিআরসি আমাদের একটি পজেটিভ রিপ্লাই দেবে। যদি আমাদের প্রস্তাবনা বিটিআরসি না মানে, যদি আসলেই মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চলে যায় এবং আমাদের লাইসেন্স যদি কমে যায়, তাহলে আমাদের তো রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা নেই মানে আমাদের পরিবার ধ্বংসের মুখে, আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এ অবস্থায় আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া তো আর কোনো উপায় থাকবে না। তবে বিটিআরসি বলেছে, আমাদের রুটি-রুজির ওপর যেন কোনো আঘাত না আসে, সেজন্য তারা ব্যবস্থা নেবে। তারপরও আমরা আজ সংবাদ সম্মেলন করলাম, মানববন্ধন করলাম এ কারণে যে, আমরা সরকারের কাছে এ বার্তা পাঠাতে যে, আমাদের রুটি-রুজি নিয়ে আমরা খুব সিরিয়াস।’
রাজিব শাহরিয়ার রুবেন্স বলেন, ‘আইএসপি লাইসেন্স কমিয়ে দেওয়ার যে চিন্তাভাবনা বিটিআরসি করছে, সেই চিন্তাভাবনা থেকে তারা যেন সরে আসে। কারণ ২ হাজার ২০০ আইএসপি লাইসেন্সের মধ্যে যদি একটিও কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ওই ব্যবসায়ীর ফ্যামিলি, তার ভবিষ্যৎ, তার ইনভেস্টমেন্ট সবই ধ্বংস হয়ে যাবে।’
লিখিত বক্তব্যে রাজিব শাহরিয়ার রুবেন্স বলেন, ‘ফিক্সড ব্রডব্যান্ড খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, যা সম্পূর্ণ স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত। যদি মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ইন্টারনেট লাইসেন্স দেওয়া হয়, তাহলে এটা বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করবে, যা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগকে ধ্বংস করবে। এভাবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী মোবাইল অপারেটরদের একতরফা সুবিধা দেওয়া হলে দেশের টেকনোলজির অগ্রযাত্রা হুমকির মুখে পড়বে এবং মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাবে।’
সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারে কি প্রস্তাবনা এসেছিল এবং আইএসপিএবির পক্ষ থেকে কী প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে – সাংবাদিকের প্রশ্নে রুবেন্স বলেন, ‘বিটিআরসি বলছে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ইউনিফাইড লাইসেন্স দেওয়া হবে। অর্থাৎ তাদের টেকনোলজি যেসব লাইসেন্স সাপোর্ট করে, সেসব লাইসেন্স তারা নিয়ে যাবে। তারা মোবাইলের মাধ্যমে যে ইন্টারনেট সার্ভিস দিচ্ছে, সেটা থেকে সরে এসে এখন ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ডের দিকে চলে আসতে চাচ্ছে।’
‘তারা বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স নিয়ে ফাইবার অপটিক দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে চাচ্ছে। ফাইবার অপটিক দিয়ে সার্ভিস তো আমরা অলরেডি দিচ্ছি। আমাদের ২ হাজার ২০০ আইএসপি খুব সুন্দরভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ছোটখাট সমস্যা থাকতে পারে, ক্যাবলের প্রবলেম থাকে, সেগুলো সমাধান করে ফেলা যায়। এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। এগুলো রেখে শুধু মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিসের অনুমোদন দেওয়া, এটা আমাদের জন্য বিশাল হুমকি।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয়, আমাদের যে ২ হাজার ২০০ আইএসপি লাইসেন্স আছে, সেগুলো কমিয়ে ফেলার কথা বিটিআরসির প্রস্তাবনায় আছে। আমরা এর বিরোধিতা করি। কারণ এসব লাইসেন্সের সঙ্গে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা জড়িত। লাইসেন্স বাতিল হলে তাদের পেটে লাথি পড়বে, তাদের ফ্যামিলিগুলো পথে বসে যাবে। আমাদের দাবি, কোনো লাইসেন্স বাতিল করা যাবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক নিয়াজ মোর্শেদ, সদস্য সচিব ফারহান ফুয়াদ, সদস্য ওমর ফারুক মুন্না ও রিদওয়ানুল কবির।
এদিন দুপুরে মোবাইল অপারেটরদের আইএসপি লাইসেন্স না দেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আইএসপিএবির উদ্যোগে মানবন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানবন্ধনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানবন্ধনে আইএসপিএবি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক রাজিব শাহরিয়ার রুবেন্স বলেন, ‘আমাদের দেহে প্রাণ থাকা পর্যন্ত, আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত মোবাইল কোম্পানিগুলোকে আমরা ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ডে আসতে দেব না। ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর শকুনের দৃষ্টি পড়েছে, এখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দৃষ্টি পড়েছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এনে এদেশ থেকে লাখ লাখ ডলার বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে।’
‘আমরা লোকাল ২ হাজার ২০০ আইএসপি সারা বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছি গত ২৫ বছর ধরে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে পৌঁছে গেছে। আজ মোবাইল কোম্পানিগুলো আমাদের ব্রডব্র্যান্ডটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। বিটিআরসির প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা সংস্কার করুন, আপনাদের সংস্কারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু মোবাইল কোম্পানিগুলোর হাতে ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ড দেবেন না।’

মানববন্ধন
সদস্য সচিব ফারহান ফুয়াদ বলেন, ‘বিটিআরসি যদি এটাকে টেলিকম খাতের কিছু মনোপলি অর্থপাচারকারীদের হাতে তুলে দিতে চায় এটা আমরা কখনো মেনে নেব না। এর জন্য যদি ঢাকায় লংমার্চ করে বিটিআরসি ঘেরাও কর্মসূচি করতে হয়, তাহলে সেটাতেও আমরা রাজি আছি। আমাদের দেহে প্রাণ থাকা পর্যন্ত এ হঠকারী সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যাবে না।’
সংগঠনটির যুগ্ম আহবায়ক নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা না থাকলে, রুটি-রুজি না থাকলে আমরা টিকতে পারব না। আমরা দশ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এ আইএসপিএবি। এটাকে কোনোভাবে বন্ধ হতে দেয়া যাবে না। আমরা সবাই এক হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’
কমিটির সদস্য ওমর ফারুক মুন্না বলেন, ‘কিছু হঠকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমাদের মতো উদ্যেক্তাদের মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা দেশীয় উদ্যেক্তা। ২ হাজার ২০০ লাইসেন্সের পেছনে আছে ২ লাখ পরিবার। বিটিআরসি এ সংস্কার প্রস্তাবের মাধ্যমে বিদেশি শকুনদের এদেশে এনে দেশের টাকা পাচার করার সুযোগ করে দিচ্ছে।’
রিভোলেশন ইন্টারনেটের প্রোভাইডার রিটন বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের হাত দিয়ে এ ডিজিটাল বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। আইএসপিএবি বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। বিটিআরসির মাধ্যমে আমাদের লাইসেন্স বাতিলের যে নীল নকশা হচ্ছে সেটা আমরা কেউ মেনে নেব না।’
সারাবাংলা/আইসি/এসআর
আইএসপিএবি’র হুঁশিয়ারি ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ফিক্সড ব্রডব্যান্ড মানববন্ধন মোবাইল অপারেটর সারাবাংলা হুশিয়ারি