নারী নির্যাতন ও হয়রানির পেছনে উগ্রগোষ্ঠীর উসকানি থাকতে পারে: রিজভী
৮ মার্চ ২০২৫ ১৬:০২ | আপডেট: ৮ মার্চ ২০২৫ ১৭:৩৫
ঢাকা: নারী নির্যাতন ও হয়রানির পেছনে উগ্রগোষ্ঠীর উসকানি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (৮ মার্চ) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও হেনস্থার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে নারীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, ঠিক তেমনি অনলাইনেও তাঁরা বিরূপ আচরণের শিকার হচ্ছেন। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রী, নারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার নারীদের ইভটিজিং, শ্লীলতাহানী এবং হেনস্থা করা হচ্ছে। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে নারীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘একের পর এক নারীকে হেনস্থা ও আক্রমণ এবং সামগ্রিক বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে কেন আজ নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং এর পেছনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, সেটি যাচাই করা প্রয়োজন। এই অসভ্যতা ও সহিংসতার পেছনে কোনো উগ্রগোষ্ঠীর উস্কানি বা মদদ থাকতে পারে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে এবং যাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি অতি রক্ষণশীল রাষ্ট্র বানানো, যেন নারীরা নিজ দেশে অধিকারহীন হয়ে পড়েন।’’
রিজভী বলেন, ‘‘বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলা এই প্রতিটি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তির দাবি করছি। নারীদের সম্মান ও স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, যা তাদের সংবিধান অনুযায়ী স্বীকৃত অধিকার। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, নারী নির্যাতনসহ সকল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কঠোরভাবে দমন করে দেশে ন্যায়বিচার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হোক।’’
তিনি বলেন, ‘‘নারীর ক্ষমতায়নকে দৃঢ়ভাবে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বিএনপির ৩১ দফায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা এবং সমাজে তাদের প্রাপ্যস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নারীর ক্ষমতায়নে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে তারা সঠিক সুযোগ ও সুরক্ষা পায়।’’
‘‘আগামীতে জাতীয় সংসদে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীদের মনোনয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০-এ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যেসব পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।তারেক রহমান ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, বিএনপি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে, তখন দেশের সকল দুঃস্থ বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে’’- বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘‘আজকের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমরা যখন নারীর ক্ষমতায়ন নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলছি, তখন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাস্তবতা অত্যন্ত হতাশাজনক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য ও অত্যাচারের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সমাজে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য এবং নারীদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে, জাতির জন্য উদ্বেগের কারণ। এই কঠিন বাস্তবতায় বিএনপি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে নারীদের নিরাপত্তা মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে এবং শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ আরও অনেকে।
সারাবাংলা/এজেড/এমপি