‘আশির দশকে নারীরা ভয়-আতঙ্কে না থাকলেও এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে’
৮ মার্চ ২০২৫ ২০:১৯
রাঙ্গামাটি: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ের কথা স্মৃতিচারণ করে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) রাঙ্গামাটি জেলার সদস্য ও শিক্ষাবিদ গৌরিকা চাকমা বলেছেন, আশির দশকেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে নিরাপদ ছিলাম। তখন আমরা একা একা ঘুরেছি, ট্রেনে-বাসে চড়েছি। কখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি; কিন্তু এখন আমাদের মেয়েরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এটা কেন? আমরা দিন দিন যতই নারী অধিকারের কথা বলছি, ততই পিছিয়ে যাচ্ছি।’
শনিবার (৮ মার্চ) বিকেলে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস- ২০২৫’ উপলক্ষ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অ্যানেক্স হলরুমে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘অধিকার, সমতা; ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
এ সময় গৌরিকা চাকমা বলেন, ‘নারী দিবসের প্রতিপাদ্যে যেসব কথা লেখা হয়েছে, সেগুলা আমাদের সমাজে সঙ্গে সম্ভব কিনা? আমাদের মেয়ে ও কন্যা শিশুরা এখন ঘরেও নিরাপদ বোধ করছে না। সবার আগে তো নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। নারীকে নাগরিক হিসেবে সমাজকে গ্রহণ করা জরুরি আগে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলেই সম-অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে।’
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে পুরুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে এবং সেটা পরিবার থেকেই। নারীদের এখন সম-অধিকার, ক্ষমতায়ন করার চেয়েও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। নারীরা এখন ক্রমাগত নিজেদের অনিরাপদ বোধ করছে। নারীদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য উদ্যোগ ও ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। নারীরা এখন সব কাজ করছে, কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একজন পুরুষ কৃষককে কৃষক বললেও নারীকে বলছে নারী শ্রমিক। নারীদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি প্রয়োজন, সেটা প্রতিটি সেক্টরেই।
আলোচনা সভায় সিএইচটি উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি টুকু তালুকদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) রাঙ্গামাটির সদস্য গৌরিকা চাকমা, সিএইচটি উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা, উইভের নির্বাহী পরিচালক ও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য নাই উ প্রু মারমা মেরী, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি ভবতোষ দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা, নারী হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) মধু চাকমা, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রুবা ডালী।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন— রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি শামীম আরা, কার্বারি (গ্রামপ্রধান) সান্ত্বনা খীসা ও ডায়না চাকমা, উন্নয়নকর্মী রিমি চাকমা, রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাব সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, রাঙ্গামাটি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সৈকত রঞ্জন চৌধুরী ও সাংবাদিক হিমেল চাকমা প্রমুখ।
আলোচনার সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন— বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) প্রোগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা, ধারণাপত্র পাঠ করেন সিএইচটি উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরামের সদস্য নুকু চাকমা। অনুষ্ঠানটির আয়োজনে ছিল সিএইচটি উইমেন নেটওয়ার্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, উইভ, প্রোগ্রেসিভ, টিআইবি ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ।
সারাবাংলা/এইচআই