আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের ভাবনা
৮ মার্চ ২০২৫ ২১:২৩
নারীর অধিকার, মর্যাদা ও সমান সুযোগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতি বছর ৮ মার্চ পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যা নারীদের দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রতিফলন। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা ভূমিকা রাখলেও বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হতে হয়। এই বাস্তবতায় নারীর নিরাপত্তা, ক্ষমতায়ন ও সমান অধিকারের দাবিতে তিতুমীর কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতামত ও অনুভূতি তুলে ধরা হলো-
সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে
বুশরাত জাহান, সমাজকর্ম বিভাগ
আমাদের সমাজে নারীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুধাবন করতে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিন খবরের কাগজে ধর্ষণের সংখ্যা দেখলেই বুঝতে পারি, আমাদের দেশে নারীরা কতটা অনিরাপদ। সেদিন নারী দিবস উদযাপন করা সার্থক হবে, যেদিন পত্রিকার পাতায় একটি ধর্ষণের খবরও দেখতে হবে না। তাই নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজের সব ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার ও সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
একজন নারী হিসেবে নিরাপদে চলাফেরা করতে চাই
অহনা পোদ্দার, দর্শন বিভাগ
আজ নারী দিবস। তবে এই দিবস নিয়ে আমার বিশেষ কোনো প্রত্যাশা নেই। আমি চাই সার্বিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা, যা কেবল নারী দিবসকে কেন্দ্র করে নয়, বরং প্রতিনিয়ত প্রয়োজন। একজন নারী হিসেবে আমি স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই, মতামত প্রকাশ করতে চাই, নিরাপদে চলাফেরা করতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? আমরা দেখছি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্ষণের সংখ্যা আগুনের ফুলকির মতো বেড়ে চলেছে। এই আগুনের ফুলকি যেন চিরতরে নিভে যায়, সেটাই আমার চাওয়া। যে চুল নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, সেই চুল যেন কোনো পুরুষের হাতে মুষ্টিবদ্ধ না হয়। আমরা নারী, আমরা পারি। সৃষ্টির শুরু থেকে দেশের সব সংকটে নারীরা যেমন অগ্রগামী ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি করতে হবে
শাহিদা খাতুন, রসায়ন বিভাগ
বর্তমান সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা, হয়রানি ও বৈষম্য দূর করে নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নারীরা যেন তাদের সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে পারে, সেজন্য পরিবার ও সমাজের সহায়তা প্রয়োজন। নারীরা ধীরে ধীরে সমাজের সব ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে, তবে তাদের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার প্রসার, সচেতনতা বৃদ্ধি ও কার্যকর আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।
নারীর শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাতৃত্ব
নাজিবা, ইংরেজি বিভাগ
নারী এক অনন্য সৃষ্টি। নারীর শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাতৃত্ব ও মমতা। নারীদের ভূমিকা সমাজে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বক্ষেত্রে নারী তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে, তবুও সমাজে নারীরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। বর্তমানে নারীরা সবচেয়ে বেশি হেনস্তার শিকার হয় পরিবার ও কর্মস্থলে। এই দুই জায়গায় নারীর প্রতি বৈষম্য ও অপরাধ রোধে নারী ও সমাজ—উভয়কেই সচেতন হতে হবে। নারীদের শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
নারীদের পিছিয়ে রেখে উন্নতি সম্ভব নয়
সাদিয়া মির্জা, গণিত বিভাগ
সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের পিছিয়ে রেখে কোনো দেশ, জাতি বা সমাজ ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশকে বিশ্ব আসরে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে হলে নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দেশকে একটি ডিজিটাল ও মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করতে নারী শিক্ষা ও নারীর নিরাপত্তার প্রতি সরকার ও জাতিকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। সে লক্ষ্যে নারী অগ্রযাত্রার প্রধান অন্তরায় কুসংস্কার রুখে দিতে হবে এবং নারী শিক্ষার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। অন্যথায়, অচিরেই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক অবক্ষয় নেমে আসতে পারে।
সারাবাংলা/এমআর/এসএইচএস