Monday 10 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বন্ধে বৃত্তি বাতিল, দেশে ফেরার ঝুঁকিতে আফগান মেয়েরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৯ মার্চ ২০২৫ ১৪:৫৬ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২৫ ১৮:৩৮

ওমানে আফগান মহিলা শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

তালেবান শাসনের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আশায় ওমানে পাড়ি জমানো ৮০-এর বেশি আফগান নারী এখন দেশে ফেরার আশঙ্কায় রয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁটের ফলে তাদের শিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হয়ে গেছে এবং সেই সঙ্গে তাদের আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রোববার (৯ মার্চ) বিবিসির প্রচারিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদেশি সহায়তা তহবিল স্থগিতের নির্দেশ দেওয়ার পরেই মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) অর্থায়িত এই স্কলারশিপ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ওমানে পড়তে আসা এক নারী শিক্ষার্থী যিনি নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ করতে চাননি বিবিসির সাক্ষাৎকারে বলেছেন,’এটা হৃদয়বিদারক। আমাদের জানানো হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’

প্রায় চার বছর আগে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা নিষিদ্ধ রয়েছে।

বিবিসি ওমানে পড়তে যাওয়া ৮২ জন আফগান শিক্ষার্থীকে পাঠানো মেইলে দেখেছে, শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ বাতিল হওয়ায় শিক্ষা কর্মসূচি বন্ধ করা হয়েছে।

ইমেইলে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই সংবাদ গভীরভাবে হতাশাজনক ও অস্থিরতা সৃষ্টিকারী হতে পারে।’ পাশাপাশি তাদের আফগানিস্তানে ফেরানোর জন্য ভ্রমণের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের জরুরি সুরক্ষা, আর্থিক সহায়তা এবং এমন একটি নিরাপদ দেশে পুনর্বাসন দরকার, যেখানে আমরা আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি।’

বিজ্ঞাপন

ওমানে বসবাসরত এসব আফগান নারী ইউএসএআইডি-এর ‘উইমেনস স্কলারশিপ এন্ডাউমেন্ট’ কর্মসূচির অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছিলেন। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির আওতায় আফগান নারীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল—যে বিষয়গুলো তালেবান সরকার নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ আগে শিক্ষার্থীদের জানানো হয় যে, তাদের স্কলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।

আফগান নারীরা ২০২১ সালে স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হন, কিন্তু এরপরই তালেবান ক্ষমতা দখল করে। তারা ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা চালিয়ে যান, কিন্তু এরপর তালেবান নারীদের উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে। এরপর ১৮ মাস অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটানোর পর তারা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। ইউএসএআইডি তখন তাদের ওমানের জন্য ভিসা ব্যবস্থা করে এবং তারা গত অক্টোবর-নভেম্বরে সেখানে পৌঁছান।

এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যদি আমাদের ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে আমাদের জন্য ভয়ানক পরিণতি অপেক্ষা করছে,’ আমাদের স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবো না, আমাদের পরিবার হয়তো আমাদের বিয়ে দিয়ে দেবে।’

তালেবান নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দাবিতে বিক্ষোভ দমন করেছে, বহু কর্মীকে গ্রেফতার, নির্যাতন ও হুমকি দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানে বসবাসরত নারীরা নিজেদের মৃতদেহের মতো চলাফেরা করা মানুষ বলে বর্ণনা করেছেন তালেবান শাসনের কঠোর নীতির কারণে।

তালেবান সরকার বলছে, তারা নারীদের শিক্ষার বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে, তবে সর্বোচ্চ নেতার আদেশগুলো ইসলামী শরিয়া আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তারা দাবি করেছে।

হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি গত মাসে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আফগান নারীদের দুর্ভোগের জন্য দায়ী বাইডেন প্রশাসনের বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহার, যা তালেবানকে মধ্যযুগীয় শরিয়া আইন চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।’

তবে এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে নেওয়া হয়েছে এবং বাস্তবায়ন করছে ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি।

সারাবাংলা/এনজে

আফগানিস্তান ইউএসএআইডি উচ্চ শিক্ষা ওমান তহবিল নারী যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর