Monday 10 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টেলিযোগাযোগ খাতের সবাইকে সতর্ক করলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ মার্চ ২০২৫ ১৫:২৮ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২৫ ২০:৩৪

আলোচনা সভায় প্রকৌশলী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। মান উন্নয়ন না করলে এই খাতে কেউ টিকতে পারবেন না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে দেশে স্টারলিংক আসছে। নিজেদের সুরক্ষায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের সেভাবেই ব্যবসা করতে হবে। লেয়ার চেঞ্জের নামে ব্যবসা থেকে কাউকে বাদ দেওয়া হবে না।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৯ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘প্রান্তিক পর্যায়ে দ্রুতগতির মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মুস্তাফা মাহমুদ হোসাইন।

ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘সবগুলো লেয়ারকে বলছি, ডাটা প্রাইস কমাতে হবে। সবাইকে সমন্বিতভাবে রিফর্ম করতে হবে। ৫ এমবিপিএসকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্রডব্যান্ড বলি না। আমি মনে করি ২০ এমবিপিএসের ওপরে গতি থাকলে সেটিই ব্রডব্যান্ড।’

সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন আইএসপিএবি'র সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক। ছবি: সারাবাংলা

সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন আইএসপিএবি’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক। ছবি: সারাবাংলা

সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যার যার জায়গা থেকে কোয়ালিটি নিশ্চিত করবেন। স্টারলিংকের বিপরীতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের নিজেদেরকেই নিজের সুরক্ষা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে সেবার মান বাড়াতে হবে।’ মোবাইল অপারেটরদের উদ্দেশে বলেন, ‘এমএনওদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এগুলো তাদের মেনে নিতে হবে। সেভাবেই সেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।’

এনটিটিএনদের উদ্দেশে ফয়েজ বলেন, ‘এনটিটিএনগুলোকে ব্যান্ডউইথ নয়, ফাইবার ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করতে হবে। একইসঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিসি, পিজিসিবি, বিটিসিএলসহ যাদের কাছেই ফাইবার পড়ে আছে সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইআইজিদের ব্যান্ডউইথ মিটরিং করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

আলোচনা সভায় ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা যারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছি, আমরাই আন ফেয়ার মার্কেট কম্পিটিশনের মুখোমুখি হচ্ছি। দুই বছর আগেই সম্পূর্ণ আইএসপি লাইসেন্সকে ঢেলে সাজানো হলো, চারটি লেয়ার করা হলো। এখন আমরা আবার শুনতে পাচ্ছি লাইসেন্স রিভিউ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মাত্র দুই বছর আগে লাইসেন্স পেয়ে আমরা বিনিয়োগটা করেছি। প্রান্তিক পর্যায়ে কেউ বাবার জমি বিক্রি করে, কেউ বউয়ের গয়না বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছে। এমনটি হলে ছোট উদ্যোক্তারা পথে বসবেন। তাই সরকারকে আমাদের বিনিয়োগের সুরক্ষা দিতে হবে। এই সেক্টরে যেন যখন তখন পলিসি চেঞ্জ করা না হয় সেই অনুরোধ রইল।’

আলোচনা সভায় আইএসপিএবি’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকসহ অনান্যরা। ছবি সারাবাংলা

বিডি জবস এর সিইও ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘দেশে ইন্টারনেটের দাম কমাতে সবচেয়ে বড় বাধা এখনো কর। ১০০ টাকার ডাটায় কর হিসাবে ৬০ টাকা যায় সরকারের পকেটে। ফলে সরকার দাম কমাতে না চাইলে, কর না কমালে ইন্টারনেটের দাম কমানো যাবে না। প্রায় ছয় মাস হয়ে গেলেও এখনো এনটিটিএন-এর মনোপলিতে হাত দিতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।’

মূল প্রবন্ধে সুপারিশে বলা হয়, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবা খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের গতি হতে হবে সর্বনিম্ন ২০ এমবিপিএস। কোয়ালিটি বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করতে হবে। ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে আনতে হবে। ডাটার কোনো মেয়াদ থাকবে না। ইন্টারনেট যেকোনো অজুহাতে বাজে কোনো কারণে সরকার বন্ধ করবে না এই ঘোষণা অথবা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। পাশাপাশি ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি দিতে হবে।

আরও পড়ুন :

‘ইন্টারনেট খাতে যখন-তখন পলিসি পরিবর্তন করবেন না’

‘ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে আইসিটি-টেলিকম খাতের সংস্কার নয়’

সুপারিশে আরও বলা হয়, অবৈধ আইএসপি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের আইএসপি ব্যবসা থেকে বিরত রাখতে হবে। ওভারহেড ফাইবার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে। ব্যান্ডউইথ ও এনটিটিএন’র দাম নির্ধারণ না করে বাজার প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দিতে হবে। ইন্টারনেটের ওপর কর কমিয়ে আনতে হবে। সহজলভ্য হ্যান্ডসেট গ্রাহকদেরকে কিস্তির মাধ্যমে অপারেটরদেরকে বিক্রয়ের জন্য বাধ্য করতে হবে।

টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মুস্তাফা মাহমুদ হোসাইন বলেন, মোবাইল অপারেটর যদি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায় আসে তাহলে আইএসপির ব্যবসা থাকবে না।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইমাদুর রহমান, টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মাহতাব উদ্দিন, আইআইজিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, বেসিসের অ্যাসোসিয়েট কমিটির সভাপতি রাফেল কবির, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসির, গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিনিয়র ডিরেক্টর করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত প্রমুখ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/ইআ

টেলিযোগাযোগ খাত প্রকৌশলী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর