ধর্ষণে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে নতুনবাজারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
৯ মার্চ ২০২৫ ১৫:০০ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২৫ ১৮:৩৭
ঢাকা: মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টার পর তারা জড়ো হয়ে রাজধানীর নতুনবাজারের কুড়িল-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।
বিক্ষোভ থেকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে ইউআইটিএস, ডিআইইউসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘নো মোর রেপিস্ট, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকের ফাঁসি দে’, ‘কণ্ঠে আবার লাগাও জোর, ধর্ষকদের কবর খোড়’, ‘আমার বোন আইসিইউতে, রেপিস্ট কেন বাহিরে’লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। মাগুরায় ৮ বছরের শিশুর ওপর পৈশাচিক বর্বরতা চালানো হয়েছে। সারাদেশে এ নিয়ে তোলপাড় হলেও ধর্ষককে গ্রেফতার দেখাতেই দুইদিন সময়ে নিয়েছে পুলিশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তারা বলেন, জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছিল। রাজপথে রক্ত দিয়ে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন সেই বাংলাদেশে ধর্ষকদের ঠাঁই হবে না। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে দৃশ্যমান বিচারের মুখোমুখি না করা হলে রাজপথ ছাড়বে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনার তিন দিন পর শনিবার মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী শিশুটির মা। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক ছেলের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। ওই বাড়িতে বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তার শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি। বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বলছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তার বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।
এ ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তার মাকে মোবাইলে বিষয়টি জানাতে গেলে তার স্বামী ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করে। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেয় এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখে। সকালে এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে, চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। পরে বাদী হাসপাতালে যান।
সারাবাংলা/এমএইচ/এমপি