Monday 10 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেটে নির্যাতনের শিকার ছেলে, সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ বাবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট
৯ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪২

নির্যাতিত ছেলে ও অভিযোগকারী বাবা

সিলেট: সিলেটের জৈন্তাপুরে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্রের পালায় পড়ে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন একজন গাড়ি চালক। ভুক্তভোগী গাড়ি চালকের পিতা জৈন্তাপুরের হেমু ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছ অভিযোগ করেন, চোরাকারবারীরা পৈশাচিক কায়দায় তার ছেলে সুমন আহমদের হাত পা বেঁধে নির্যাতন করেছে। পরবর্তীতে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে তিনি মামলা দায়ের করলেও জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখছে না।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৮ মার্চ) সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও জানান, তার ছেলে সুমন ডিআই গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। গত ডিসেম্বর মাসে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে হরিপুর বাজার থেকে চেরাই চক্রের বিপুল পরিমাণ অবৈধ মালামাল আটক করে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত চোরাকারবারীরা অবৈধ মালামাল গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তার ছেলেকে সন্দেহ করে। অথচ এ ঘটনায় তার ছেলের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

চোরাকারবারী চক্রের মধ্যে রয়েছে হেমু হাউদপাড়া গ্রামের মো. ইলিয়াছ মিয়ার ছেলে জুবের আহমদ, একই গ্রামের মৃত ফখরুল ইসলাম মোহরীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, আজিজুর রহমানের ছেলে সোহেল আহমদ ও মৃত হাফিজ মাহমুদ হাসানের ছেলে ইয়াহিয়া মাহমুদ, উপর শ্যামপুর গ্রামের লুদাই মিয়ার ছেলে মো. সালমান আহমদ, লামা শ্যামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে ইলিয়াছ মিয়া, আমিন আহমদের ছেলে মো. ফখরুল ইসলাম, মো. রইছ মিয়ার ছেলে মো. সায়েম, শ্যামপুর পাটুয়া গ্রামের মৃত জমসেদ আলী উরফে ছনির মেম্বারের ছেলে লোকমান উরফে লম্বা লোকমান, বাগের খাল দলাইপাড়া গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে আফাজ আহমদ, জুহাইর টুল গ্রামের মুসা মিয়া ওরফে কুটিনার ছেলে নাজিম উদ্দিন, উপর শ্যামপুর গ্রামের লোদাই মিয়ার ছেলে রেজোয়ান, লামা শ্যামপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে আমিনুর রশীদ, হেমু ভেলোপাড়া গ্রামের সামসুল হকের ছেলে শাকিল আহমদ, হেমু ভাটোপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে জুবের আহমদ, একই গ্রামের মৃত মইন উদ্দিনের ছেলে শাহ আলম সোকাই, লামা শ্যামপুর গ্রামের সামসুল হোসাইনের ছেলে সোয়েব আহমদ প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল কুদ্দুস জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চোরাকারবারীরা হরিপুর বাজার থেকে তার ছেলেকে অপহরণ করে শারীরিক নির্যাতন ও খুনের উদ্দেশ্যে একটি প্রাইভেট কারে তুলে লামা শ্যামপুর গ্রামের দিকে নিয়ে যায়। এ খবর শুনে তিনি বিষয়টি জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশকে জানালে সেখানকার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখছি।’ কিন্ত রাত ১১টা অতিক্রম হয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ।

আবার যোগাযোগ করলে ওসি বলেন, ‘তাকে এখন অপহরণ করা হয়েছে আপনারা অপহরণের মামলা করেছেন। যদি তাকে হত্যা করে ফেলে, সমস্যা নাই আমরা হত্যা মামলা নেব।’ এ কথা শুনে আব্দুল কুদ্দুছ নিরাশ হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দরবস্ত ক্যাম্পে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিবরণ শুনে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জৈন্তাপুর থানায় যোগাযোগ করেন। তখন পুলিশ জানায় তারা বিষয়টি দেখছে।

এ কথা শুনে সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত অফিসার পুলিশকে বলেন, ‘উদ্ধার কাজে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারেন। তারপরও সারারাত পুলিশ কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি।’

আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ‘পরে ভোর রাতে অপহরণকারীরা নিজ থেকে জৈন্তাপুর থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার ছেলেকে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে ওইদিন দুপুরে আমার ছেলে সুমনকে পুলিশ হেফাজতে সিলেট কোর্টে নেওয়া হয়। সেখানে আদালতের নিকট সে জবানবন্দী রেকর্ড করে।’

অবশেষে দীর্ঘ সময় পর পুলিশ তার ছেলেকে উদ্ধার করলেও চোরাকারবারী চক্রের কাউকে গ্রেফতার করেনি। ২৮ ডিসেম্বর রাতেই তিনি বাদী হয়ে উল্লেখিত চোরাকারবারীদের আসামি করে জৈন্তাপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো আসামী গ্রেফতার করেনি। উলটো ওসি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শংকর চন্দ্র দেব চোরাকারবারীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার ছেলের উপর নির্যাতনকারী চোরাকারবারী চক্রকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশের আইজিপি, সিলেটের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

নির্যাতনের অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন সিলেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর