Monday 10 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিহারের দাদার ‘শরবতে মহব্বত’ নাতির হাত ধরে চট্টগ্রামে

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ মার্চ ২০২৫ ১৭:৪২ | আপডেট: ৯ মার্চ ২০২৫ ১৭:৫০

বিহারের দাদার ‘শরবতে মহব্বত’ নাতির হাত ধরে চট্টগ্রামে। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিকেল হতেই মানুষের দীর্ঘ সারি। রাস্তার ওপর ভাসমান একটি শরবতের দোকানকে ঘিরে সবার আগ্রহ। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় লাল মিয়ার ‘মহব্বতের’ শরবত খেলে যেন প্রাণ জুড়ায়! তাই তো বিকেল গড়াতেই তার দোকানের সামনে শুরু হয় মানুষের আনাগোনা। বিশেষ করে রমজানে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি থাকে।

শুধু রমজানে নয়, সারাবছর জুড়ে চলে লাল মিয়ার এ মহব্বতের রঙিন ব্যবসা। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে এ শরবত বিক্রি করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নগরীর লাভ লেইন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, লাল মিয়ার মহব্বতের শরবত কিনতে ভিড় করেছেন অনেক মানুষ। মানুষের ভিড় ও বিক্রি সামলাতে তাকে রাখতে হয়েছে ছয়জন কর্মচারী।

লাল মিয়া সারাবাংলাকে জানান, ভারতের বিহারে তার দাদা রাজু শেখের হাত ধরেই এই শরবতের ব্যবসা শুরু হয়। দেশভাগের পর তারা বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপর তারা গাজীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। তারা বাবা শামসুল শেখও গাজীপুরে এই শরবত বিক্রি করে তাদের বড় করেছেন। ২০০৮ সালের দিকে তিনি চট্টগ্রাম চলে আসেন। তখন থেকেই লাভ লেইন এলাকায় শুরু করেন শরবত বিক্রির ব্যবসা। সেই থেকেই তিন পুরুষের ব্যবসা ধরে রেখেছেন তিনি। বংশ পরম্পরায় এখন সেই ব্যবসার হাল ধরার পালা লাল মিয়ার ছেলে ইয়াসিনের।

`আমাদের এখানের প্রত্যেক শরবতে আটটি থেকে ১০টি উপাদান থাকে। কোনো কেমিক্যাল আমরা ব্যবহার করি না’। ছবি: সারাবাংলা

`আমাদের এখানের প্রত্যেক শরবতে আটটি থেকে ১০টি উপাদান থাকে। কোনো কেমিক্যাল আমরা ব্যবহার করি না’। ছবি: সারাবাংলা

প্রতিদিন সকাল থেকেই শরবত তৈরি করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন লাল মিয়া ও তার ছেলে ইয়াসিন। বরফের সঙ্গে রুহ আফজা, মধু, ইসুবগুলের ভুসি, বাদামসহ নানা উপাদানে তৈরি হয় তার এসব মজাদার পানীয় ‘শরবতে মহব্বত’। তার দোকানে তিন ধরনের শরবত পাওয়া যায়। এর মধ্যে তরমুজ, বরফ, রুহ আফজা ও তোকমায় তৈরি হয় শরবতে তরমুজ। এই শরবতের দাম প্রতিলিটার ১৪০ টাকা। এক গ্লাস তরমুজের শরবত বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। আর কাজু, কাঠ বাদাম, মধু, বরফ ও রুহ আফজায় তৈরি হয় বাদাম শরবত। লিটার ২০০ টাকা। এ ছাড়া, দুধ, চিনি, জাফরান ও পেস্তা বাদামে তৈরি হয় স্পেশাল শরবত, যার দাম ৩৫০ টাকা লিটার।

বিজ্ঞাপন

লাল মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে আমি শুধু তরমুজের শরবত বিক্রি করতাম। তাও গ্লাসে করে। তখন এক গ্লাস শরবত আমি বিক্রি করতাম তিন ও পাঁচ টাকায়। এখন আমি এক গ্লাস শরবত বিক্রি করি ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত আমি এখানে শরবত বিক্রি করি। এত বেশি কাস্টমার হয় যে, এখন আমাকে ছয়জন কর্মচারী রাখতে হয়েছে। বংশ পরম্পরায় এ ব্যবসা ধরে রেখেছি।’

লাল মিয়ার ছেলে ইয়াসিন সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রাম শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে তাদের শরবত খেতে ও কিনতে ক্রেতারা আসেন। নগরীর মুরাদপুর, পতেঙ্গা, অক্সিজেন, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ ছাড়াও সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থেকেও মানুষ আসেন তাদের শরবত কিনতে।

রমজানে প্রতিদিন অন্তত ২০০ লিটার শরবত বিক্রি হয়। ছবি: সারাবাংলা

রমজানে প্রতিদিন অন্তত ২০০ লিটার শরবত বিক্রি হয়। ছবি: সারাবাংলা

বছরের ৩৬৫ দিনই তাদের দোকান খোলা থাকে। তবে রমজান মাসেই তাদের সবচেয়ে বেশি শরবত বিক্রি হয়। রমজানে প্রতিদিন অন্তত ২০০ লিটার শরবত বিক্রি হয়। আর অন্যান্য দিনে ৩০ থেকে ৫০ লিটার শরবত বিক্রি হয়।

ইয়াসিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে দোকানে বসে শরবত বিক্রি করছি। পাশাপাশি দূরদুরান্ত থেকে মানুষ এসে আমাদের শরবত কিনে নিয়ে যায়। কেউ এখানেই খায়। চট্টগ্রাম শহরে আমার বাবাই প্রথম এই মহব্বতের শরবত বিক্রি শুরু করেন। এখন অনেক জায়গায় মহব্বতের শরবত বিক্রি হচ্ছে। তবে সেখানে দু-তিনটি উপাদান দেয়া হয়। অনেকে কেমিক্যালও দেয় বলে শুনেছি। আমাদের এখানের প্রত্যেক শরবতে আটটি থেকে ১০টি উপাদান থাকে। কোনো কেমিক্যাল আমরা ব্যবহার করি না।’

মশিউর ও রাহাত নামে দুই বন্ধু মোটরসাইকেলে করে এসেছিলেন লাল মিয়ার মহব্বতের শরবত কিনতে। দুজনেই প্রত্যেকের পরিবারের জন্য দুই লিটার করে মোট চার লিটার তরমুজের শরবত কেনেন।

 

নগরীর লাভ লেইন এলাকায় প্রতিদিনই লাল মিয়ার মহব্বতের শরবত কিনতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। ছবি: সারাবাংলা

নগরীর লাভ লেইন এলাকায় প্রতিদিনই লাল মিয়ার মহব্বতের শরবত কিনতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। ছবি: সারাবাংলা

মশিউর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত পাঁচ বছর ধরে এখানকার শরবত খাচ্ছি। মাঝে মাঝে বন্ধুরা মিলে এখানে এসে তাদের শরবত খাই। রমজানে প্রতিদিন দুই লিটার করে শরবত নিয়ে যায়। আমার পরিবারের সবাই তাদের শরবত খেয়েই ইফতারি শুরু করেন।’

রাহাত সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের আরও কয়েক জায়গায় এরকম শরবত বিক্রি হয়। সব জায়গায় মোটামুটি খেয়েছি। তবে এখানকার শরবতের স্বাদই আলাদা। আর প্রায়ই এখানে আসায় চাচার সঙ্গে একটি সখ্যতা গড়ে উঠেছে। টাকা না থাকলেও চাচা আমাদের বিনামূল্যেও খাওয়ান মাঝে মাঝে।’

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

ইয়াসিন চট্টগ্রাম লাল মিয়া শরবতে মহব্বত