‘বৈষম্য নিরসনে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি’
৯ মার্চ ২০২৫ ২৩:৪২
ঢাকা: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় নারীর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্জন থাকলেও অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিচারে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে। তাই নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসনে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ একান্ত জরুরি।
রোববার (৯ মার্চ) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ: সাম্প্রতিক ধারার পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনলাইন মতবিনিময় সভায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন আলোচকেরা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে অংশ নেন নারী অধিকার অ্যাকটিভিস্ট, শ্রমিক সংগঠক, অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপনের সময় উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা কর্মকর্তা অরণী হক বলেন, ‘সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে জাতীয় বাজেটের ২৭ থেকে ৩৪ শতাংশ জেন্ডার সমতা বিধানের জন্য ব্যয় করা হলেও, অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে তা কাঙ্ক্ষিত প্রভাব রাখতে পারেনি। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও, নারীরা মূলত যুক্ত হয়েছেন নিম্ন বেতন/মজুরির কাজে। তাই ২০১৭ থেকে ২০২২-এর মধ্যে নারীর গড় মজুরি বৃদ্ধি না পেয়ে ৯ শতাংশ কমে গেছে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘অর্থনীতির উদীয়মান খাতগুলোতে শুরু থেকেই নারীর বেশি বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার। এ ছাড়াও নারী উদ্যোক্তারা যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলো দূরীকরণের ওপরও জোর দিতে হবে।’
পেশা বা চাকরি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নারীদের অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির পাশাপাশি অন্য অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হয় বলে জানান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উম্মে ফারহানা। তিনি বলেন, ‘চাকরি থেকে যে বেতন পাওয়া যায়, তার তুলনায় চাকরি পেতে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয় বলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীরা অনেক সময় চাকরি খোঁজেন না।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা বলেন, ‘অতিদরিদ্র পরিবারের কমবয়সী নারীরা অনেক সময় ফসলের মাঠে বেশি মজুরিতে কাজের সুযোগ উপেক্ষা করে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। মাঠে কাজ করে গায়ের রং কালো হয়ে গেলে বিয়ে হবে না-মনে করায় তারা এমন সিদ্ধান্ত নেন।’
গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন জোরদার করতে না পারার পেছনে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছোট বলে প্রায়ই ভুল যুক্তি তুলে ধরা হয়।’
এই যুক্তির ব্যাখ্যায় তাসলিমা আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো অনেক নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ (যেমন: বলিভিয়া, বেনিন, নেপাল ইত্যাদি) নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। কাজেই যথাযথ বিনিয়োগ ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশেও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে বেগবান করা সম্ভব।’
সমাপনী বক্তব্যে উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন, ‘বাংলাদেশে পুরুষেরা বেশি আয়ের আশায় কৃষি খাত থেকে সরে গিয়ে শিল্প ও সেবা খাতে কাজ নিচ্ছেন। কৃষিতে সৃষ্টি হওয়া শূন্যতা পূরণে ভূমিকা রাখছেন নারীরা। তাই সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় নারীর এই অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তারাও যেন অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুফল সমানভাবে পান তা নিশ্চিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম এবং ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্যসচিব জাহিদ রহমান।
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম