বিনা নোটিশে বাড়ল ট্রেনের ভাড়া
১০ মার্চ ২০২৫ ০৩:১৫ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ০৩:২৭
রাজশাহী: আগামী ১৮ মার্চ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে যমুনা রেল সেতু। এর আগে কোনো নোটিশ ছাড়াই বাড়ানো হলো পশ্চিমাঞ্চল রেলের বেশকিছু ট্রেনের ভাড়া। ১৯ তারিখ থেকে এই বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে ট্রেনের যাত্রীদের। প্রায় প্রতিটি ট্রেনে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে এর জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেল কোনো নোটিশ দেয়নি।
রোববার (৯ মার্চ) সকালে অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে ১৯ তারিখের ট্রেনের টিকিটের দাম বেশি দেখা যায়। নিয়মিত যাতায়াত করা যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভও দেখা গেছে। যাত্রীরা বলছেন, বিনা নোটিশে ঈদের আগে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে পশ্চিম রেলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ধূমকেতু, সিল্কসিটি ও পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া ১৯ তারিখ থেকে শোভন চেয়ার ৪০৫ টাকার স্থলে ৪৫০ টাকা, স্নিগ্ধা ৭৭১ টাকার স্থলে ৮৬৩ টাকা, এসি স্পেশাল ৯২৬ টাকার স্থলে ১০৩৫ টাকা এবং এসি বার্থ ১৩৮৬ টাকার স্থলে ১৫৪৭ টাকা দিতে হচ্ছে। হিসাবে প্রতি যাত্রীকে শোভন চেয়ারের জন্য ৪৫ টাকা, স্নিগ্ধার জন্য ৯২ টাকা, এসি স্পেশালের জন্য ১০৯ টাকা এবং এসি বার্থের জন্য ১৬১ টাকা বেশি দিতে হবে।
এ ছাড়া, বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া শোভন চেয়ার ৪৫০ টাকার স্থলে ৪৯৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৮৫১ টাকার স্থলে ৯৪৯ টাকা এবং এসি স্পেশাল ১০২৪ টাকার স্থলে ১১৩৯ টাকা। এই ট্রেনে শোভন চেয়ারের জন্য ৪৫ টাকা, স্নিগ্ধার জন্য ৯৮ টাকা এবং এসি স্পেশালের জন্য ১১৫ টাকা বেশি দিতে হবে।
ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো ছাড়াও যমুনা সেতু দিয়ে চলাচলকারী যেসব ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে সেগুলো হলো- নীলসাগর এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, চাপাই মেইল, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। তবে এই ট্রেনগুলোর টিকিট রোববার বিকেল পর্যন্ত অনলাইনে পাওয়া যায়নি। নির্ধারণ করা হয়নি কোনো ভাড়াও।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোনে কল করে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাসকেও পাওয়া যায়নি। তবে অতিরিক্ত চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার খালিদুন নেসা বলেন, ‘ডিটেইলস সোমবার (১০ মার্চ) ছাড়া বলা সম্ভব হবে না। তবে এটা নিশ্চিত যে, টোল হিসাব করেই ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সব ট্রেনের ভাড়াই বাড়ানো হবে।’
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর নয় হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ওপর ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের রেল সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরে এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি দুই লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
সেতুটির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি’ ও আইএইচআই জয়েন্ট ভেঞ্চার। প্রকল্পের শুরুতে দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর নাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’। অন্তবর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেল সেতু’ নামকরণ করে।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি নবনির্মিত যমুনা রেল সেতু দিয়ে প্রথমবারের মতো যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সেদিন রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ‘সিল্কসিটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি প্রথম যমুনা রেল সেতু অতিক্রম করে ঢাকার দিকে রওনা হয়। তবে সেদিন থেকে আগামী ১৮ তারিখ পর্যন্ত একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। ১৯ তারিখে উদ্বোধনের পর দুই লাইনে চলবে ট্রেন।
সারাবাংলা/পিটিএম