ইসি’র গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগেই নতুন ১১ দলের আবেদন
১০ মার্চ ২০২৫ ১২:৩৯ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ১৩:২৮
ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে, নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন নিতে আবেদন আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (১০ মার্চ) এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করার আগেই নতুন ১১টি দল ইসিতে আবেদন করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে নতুন দলের নিবন্ধন বিষয়ে সংস্কারের পর সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো বলে মনে করছেন নির্বাচন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম সুজন।
ইসি সূত্র জানা গেছে, বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদনকারী ৯৩টি দলের বহির্ভূত অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের পর ১১টি দল বিবেচ্যপত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন/প্রতীক প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন।
নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা সেই ১১টি নতুন রাজনৈতিক দলের নামগুলো হলো-
- ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ (ন্যাপ বাংলাদেশ)
- সমতা পার্টি
- বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন আন্দোলন
- বাংলাদেশ বৈষম্য বিরোধী গণতান্ত্রিক দল
- ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ (এন সি বি)
- বাংলাদেশ মুসলিম পার্টি, জাতীয় পার্টি
- তৃণমূল জাতীয় পার্টি
- বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি
- সর্বজন বিপ্লবী দল
- মৌলিক বাংলা
- বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন আন্দোলন (প্রস্তাবিত)
এদিকে আইন অনুয়ায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে আবেদন করা প্রত্যেক দলকে নিবন্ধন পেতে শর্ত পূরণ করতে হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হয়।
শর্তগুলো হলো-
- স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে বিজয়।
- সেসব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের ৫ শতাংশ অর্জন; অথবা কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকতে হবে।
- দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় জেলা অফিস থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় অফিস থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবেন।
- এসব ছাড়াও নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলটির গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা; কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখা (২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ)—এসবসহ আরও কিছু বিধান রাখার শর্ত রয়েছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কিছু শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করেছে। তাদের দেওয়া প্রস্তাব হলো- নিবন্ধন পেতে ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ উপজেলা বা থানায় দলের অফিস এবং দলটির কমপক্ষে পাঁচ হাজার সদস্য থাকতে হবে।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের বিষয়ে, নির্বাচন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম সুজন সারাবাংলাকে আরও বলেন, রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন পেতে হলে বিদ্যমান আইনে সব রয়েছে। তবে আমরা নতুন করে সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছি সে বিষয়ে সরকারের কাছে থেকে এটা সিদ্ধান্ত আসার পর কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ভালো হতো।
সংস্কার প্রধান বলেন, অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে আইনের মধ্য দিয়ে নিবন্ধিত হতে হবে। তবে নতুন রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে শর্তগুলোর বিষয়ে এটু অপেক্ষা করার প্রয়োজন ছিল।
রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা বাতিল নয়তো নিবন্ধন শর্ত সহজ করার দাবি জানিয়েছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
আবার গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ইসির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ইস্যুতে বলেছিলেন, সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের দল করার অধিকার আছে। নিবন্ধন শর্ত কঠিন করে সেই অধিকার খর্ব করা হয়েছে। তাই নিবন্ধন পদ্ধতিটা সহজ করার জন্য বলেছি।
এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাঁচটি দল ইসির নিবন্ধন পেয়েছে। দলগুলো হলো- আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
এ ছাড়া নির্বাচনি প্রতীক ‘আম’ নিয়ে দ্বন্দ্ব সমাধানে আবারও ইসির শরণাপন্ন হয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) দুই অংশ। ইতিমধ্যে দুই পক্ষের সঙ্গে শুনানি করেছে ইসি। ফলে প্রতীক কারা বরাদ্দ পাচ্ছেন তা জানা যাবে ইসি সিদ্ধান্ত জানানোর পর।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি।
সারাবাংলা/এনএল/ইআ