Monday 10 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখন পর্যন্ত নির্বাচনের টাইম-টেবিল দেখিনি: আলী রীয়াজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ মার্চ ২০২৫ ১৬:২১ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ১৬:২৩

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ – (ফাইল ছবি)

ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। ফলে ঐকমত্য কমিশনের কাজের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার কারণ নেই। ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বার বার বলা হয়েছে। তবে নির্বাচনের যে টাইম-টেবিল তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সে টাইম-টেবিল দেখিনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুতই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে এবং খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে (নির্বাচন) আরো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা জানানো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১০ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফররাজ হোসেন ও এমদাদুল হক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যেকোনো অবস্থাতেই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এই আলোচনা অগ্রসর হবে। সুপারিশের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের পাশাপাশি নাগরিকদের মতামত জানার জন্য খুব শিগগিরই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হবে। কেবলমাত্র রাজনৈতিক দল নয়, এ দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এই সমস্ত সংস্কারের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত দিতে পারবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু ও স্বল্প সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

‘অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করা যায় কি না’-এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, অতীতে যে সমস্ত প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, সেটা আমরা বিবেচনায় রেখেছি। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যে সমস্ত প্রস্তাব আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আমরা সন্নিবেশিত করার চেষ্টা করেছি।

তিনি আরো বলেন, অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করা যায়, এটা বাংলাদেশে হয়েছে। ফলে এটা সঠিক-বেঠিক, আমি একমত বা দ্বিমত হতে পারি। তবে এটা অতীতে ঘটেছে যে-একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনী হয়েছে। যা পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদে সংশোধনী হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গণপরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, গণপরিষদের আলোচনা আছে। ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছে- তারা গণপরিষদ চায়। এই বাইরেও অনেক রাজনৈতিক শক্তি আছে, রাজনৈতিক দল, যারা অতীতেও গণপরিষদের কথা বলেছে। কেবলমাত্র ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে নয়। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবত যারা সংবিধান নিয়ে আলোচনা করে, রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে, তারা কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংস্কারের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামত চেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলো মতামত জানাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর শুরু হবে আলোচনা। আলোচনার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সে সময় থেকেই আলোচনার শুরু হবে। আরো বলা হয়, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর প্রতি যত দ্রুত সম্ভব মতামত জানাতে বলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো, সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ ও ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো, প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়। এ ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ ও ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেওয়ার একটি জায়গা রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশন গত ৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়। এসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করতে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। এজন্য পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোকে ছকের আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এই ছকগুলো ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই ছকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যুক্ত করা হয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস

সংবিধান সংস্কার সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ