এলডিসি উত্তরণে আরও ২-৩ বছর সময় প্রয়োজন
১০ মার্চ ২০২৫ ১৭:৫৪
ঢাকা: বিদ্যমান বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক বাস্তবতা, শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, উচ্চ সুদ হার ও বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের স্বল্পতার কারণে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি) উত্তরণ কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বছর পিছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সাপোর্ট টু সাসটেইন্যাবল গ্রাজুয়েশন প্রজেক্ট (এসএসজিপি) যৌথভাবে ‘এলডিসি উত্তরণে ‘মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস) বাস্তবায়ন’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বেসরকারিখাতের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি হতে উত্তরণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিরতা, শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, উচ্চ সুদ হার ও বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের স্বল্পতা প্রভৃতি কারণে আমাদের বেসরকারিখাত প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বছর পিছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যেখানে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে ৫টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ‘মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস)’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ফ্রেমওয়ার্কের বাস্তবায়ন, শক্তিশালী নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার, পার্টনারশীপ ও সহমর্মিতা, নীতির সমন্বয়, অর্থায়ন নিশ্চিতকরণে কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তাবয়ন এবং সর্বোপরি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে ইআরডি’র সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য সুবিধা চলে যাওয়ার প্রভাব মোকাবেলায় আমাদেরকে সকল স্তরে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি জানান, এক্ষেত্রে বেসরকারিখাতের প্রয়োজন নির্ধারণ ও সমাধানের লক্ষ্যে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি প্রণয়ন করা হবে। স্থানীয় ভাবে পণ্য উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তবে চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাবের বর্তমান অবস্থা বেশ উন্নতি হওয়ায় এক্ষেত্রে আশার সঞ্চার হচ্ছে। তথ্যগত বিভ্রান্তি ও ব্যবধান দূর করতে সরকারকে ইউএনএসক্যাপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কারিগরি সহায়তা করবে।
তিনি জানান, সরকারের সকল স্তরের কার্যক্রমে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসতে দক্ষিণ কোরিয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকবেলায় শুরু থেকেই যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ঘাটতি ছিল। তবে বেসরকারিখাতের মতামতের ভিত্তিতে কতটুকু টেকসই উপায়ে এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে অগ্রসর করা যাবে, সে দিকে নজর দেওয়া হবে। তিনি তৈরি পোশাক খাতের পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি প্যাকেজিং খাতের উন্নয়নের উপর মনোযোগী হওয়ার জন্য বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিদের আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি’র প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে আমাদের বেসরকারিখাত, এমতাবস্থায় বেসরকারিখাতের সহায়তার পাশাপাশি এলডিসি উত্তরণ সার্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রণীত এসটিএস বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত কার্যক্রম একান্ত অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় এসএসজিপি’র কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মো. রেজাউল বাসার সিদ্দিকী, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ইটিবিএল হোল্ডিংস লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমান, আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র চেয়ারম্যান ও ডিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক মনোয়ার হোসেন, বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী অংশ নেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনজে