Tuesday 21 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধার
অগ্রাধিকার তালিকায় ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, ৮ দফা কর্মপরিকল্পনা

সোহেল রহমান যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
১০ মার্চ ২০২৫ ২০:৩৪ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ২২:২২

– ছবি : প্রতীকী (সংগৃহীত)

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধার বা ফিরিয়ে আনতে পাচার সংশ্লিষ্ট ১১টি (ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান) কেইস অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। একই সঙ্গে এসব কেইসের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে ৮ দফা কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।

সোমবার (১০ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১১টি কেইস ছাড়া অন্যান্য অর্থ পাচারের কেইসের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০০ কোটি টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ বিদেশে পাচারকৃত অর্থের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক আইনি ফার্ম/কোম্পানি/লিটিগেশন ফান্ডের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ সংশ্লিষ্ট তথ্য বিএফআইইউ ব্যাংকগুলো থেকে সংগ্রহ করছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে এ সংক্রান্ত কয়েকটি ফার্ম/কোম্পানি ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে। লিটিগেশন ফার্ম কর্তৃক গৃহীত কেইসগুলোর আইনি প্রক্রিয়া শেষে উদ্ধারকৃত অর্থ থেকে একটি নির্দিষ্ট শেয়ার ফি হিসেবে দেওয়া হবে।

বৈঠকে অগ্রাধিকারভুক্ত ১১টি কেইসের বিষয়ে ৮ দফা গৃহীত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- সংশ্লিষ্টদের দেশে ও বিদেশে অবৈধ সম্পদ চিহ্নিতকরণ ও অনুসন্ধান করা; উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)/লেটার রোগেটরি (এলআর) প্রেরণ; অবৈধ সম্পদ অবরুদ্ধকরণ (ফ্রিজিং), ক্রোক বা সংযুক্তকরণ (এটাচিং); জব্দকরণ (সিজিং); বাজেয়াপ্তকরণ (কনফিসকেটিং); মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য আদালতে প্রমাণক হিসেবে উপস্থাপন; বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নকরণ এবং অবৈধ সম্পদ প্রত্যর্পণ ও ব্যবস্থাপনা।

এছাড়া অর্থ উদ্ধারে বিশ্বব্যাংক (এসটিএআর), ইন্টারন্যাশনাল এন্টি করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি), ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকোভারি (আইসিএআর)-এর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, অগ্রাধিকারভুক্ত ১১টি কেইসের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান এবং তালিকার দুই নম্বরে রয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান।

বৈঠকে এ দুই কেইসের বিষয়ে যৌথ তদন্ত দল সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানানো হয় যে,
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান এবং মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকে রাশিয়ান ‘স্লাশ ফান্ড’-এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া ১২৪টি ব্যাংক একাউন্টে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা; রাজউক-এর ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা (দলিল মূল্য) মূল্যের ৬০ কাঠা প্লট; ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ ৮টি ফ্ল্যাট সংযুক্তি/অবরুদ্ধকরণ করা হয়েছে। গৃহীত আইনি পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে ৬টি মামলা দায়ের; ৬টি কেইসের তদন্ত সম্পাদন ও চার্জশীট দাখিল এবং পরিবারের ৭ সদস্যের ওপর আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

বৈঠকে কেইস-২ তথা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানানো হয় যে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা ও অন্যান্য অপরাধমূলক অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাসমূহ তদন্তাধীন রয়েছে। এর মধ্যে কর ফাঁকির অভিযোগে ১১টি মামলা তদন্ত করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্যান্যের মধ্যে ২০ কোটি টাকা মূল্যমানের ৪টি সম্পত্তি সংযুক্তি; ২টি ফ্ল্যাট ও ৩১ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৩৯ ডেসিমাল সম্পত্তি সংযুক্তির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ৩৯টি ব্যাংক একাউন্ট, যার মোট ব্যালেন্স ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা; ১০২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার আদালত কর্তৃক অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়েছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি ও যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি সম্পত্তি সংযুক্তির জন্য মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট প্রেরণ; ৩টি মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পররষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে; ২ জন ব্যক্তির আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/আরএস
বিজ্ঞাপন

আরো

সোহেল রহমান - আরো পড়ুন