আসছে পাতাল রেল, ৮০ কিমি গতিতে দিনে যাত্রী টানবে ৮ লাখ
১০ মার্চ ২০২৫ ২২:৩৬ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ২২:৩৮
ঢাকা: আড়াই মিনিট পর পর স্টেশনে থামবে ট্রেন। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক কোচে থাকবে ওয়াইফাই সুবিধা। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে। দিনে যাত্রী টানবে ৮ লাখ। উড়াল পথের পর এবার মেট্রো যাচ্ছে পাতালে। যেন মাটির নিচে হতে যাচ্ছে আরেক ঢাকা। যা রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আর এর জন্য রাজধানীবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৫ বছর। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল বলছে, চলতি বছরে কার্যাদেশ পেলে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে দেশের একমাত্র পাতাল রেল।
যে পথে চলবে পাতাল রেল
পাতাল ও উড়ালপথ মিলিয়ে এমআরটি লাইন-১ এর মোট দৈর্ঘ্য সোয়া ৩১ কিলোমিটার। এর থাকবে দু’টি রুট। মূল রুটটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। যার দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এই রুটে ১২টি পাতাল স্টেশন থাকবে। স্টেশনগুলো হলো কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, হাতিরঝিল পূর্ব, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নদ্দা, খিলখেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এবং বিমানবন্দর।
পূর্বাচল রুটটি হবে নতুনবাজার পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। এ রুটে স্টেশন থাকবে নয়টি। যার সাতটি উপরে, বাকি দু’টি নিচে। সাতটি স্টেশন হবে জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, জাতীয় ক্রিকেট গ্রাউন্ড, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব ও পূর্বাচল টার্মিনাল।
নদ্দা ও নতুনবাজার স্টেশন দুইটি বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে থাকবে মাটির নিচে। অর্থাৎ রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে ছুটবে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল। প্রতিটি একমুখী মেট্রোরেল প্রতিবার ১২ স্টেশনে থেমে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যাবে।
নির্মাণ কাজের অগ্রগতি
এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটি মোট ১২টি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ সিপি-১ আওতায় নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পিতলগঞ্জ মৌজায় ৮৮ দশমিক ৭১ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে সেখানে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। বর্তমানে এর অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাশেম ভূইয়া সারাবাংলাকে জানান, প্যাকেজ সিপি-২ আওতায় স্টেশনের পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে। কাঠামোগত কাজ বাকি আছে। টেকনিক্যাল মূল্যায়ন করার পরে জাইকার অনুমোদন পেলে পরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে বাকি যে ১১টি প্যাকেজের দরপত্র পক্রিয়াধীন। এর মধ্যে মাটির নিচের টানেল ও স্টেশন নির্মাণে রয়েছে চারটি প্যাকেজ। জুনের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কাজ শুরুর করতে চায় কর্তৃপক্ষ।
৪ বছর পিছিয়েছে যে কারণে
প্রাথমিক পরিকল্পনায় এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটি ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা চার বছর পিছিয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাতা সংস্থা জাইকার সঙ্গে বেশ কিছু ইস্যুতে একমতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে। তাই, প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়েছে।
প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, ২০২৬ সালে এমআরটি লাইন-১ শেষ করার কথা ছিল। নানা কারণে এটি হচ্ছে না। চলতি বছর কার্যাদেশ পেলে পুরো কাজ শেষ করতে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে। প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাশেম ভূইয়া বলেন, ‘গেল বছরের সেপ্টেম্বরে মাটির নিচের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি প্রায় ১ বছর পিছিয়ে গেছে। জাইকার অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই দেরি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাইকার সঙ্গে ফয়সালা হচ্ছিল না। তারা বিভিন্ন জিনিস চাচ্ছিল। বিডিটি টু ডলার কনভার্ট নিয়েও ঝামেলা ছিল। অ্যাসপার বিডিং ডকুমেন্ট পরে আমরা পাঠিয়েছে। তাতে তারা রাজি হয়নি। পরে তারা বলল, তাদের বোর্ডে তুলতে হবে। কাজিমা করপোরেশনের জাপানে যে বোর্ড সেখানে তোলার কথা বলেছে। এটা ২০ মার্চ বোর্ডে তোলা হবে। এর পর কার্যাদেশ এলে শুরু হবে পাতালের কাজ।’
পাতাল-উড়াল মিলিয়ে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন থামবে সাড়ে তিন মিনিট পর পর। পুরো রুটে চলবে ২৫টি ট্রেন। যার প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী পরিবহণের সক্ষমতা থাকবে। তাতে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী মেট্রোতে যাতায়াত করতে পারবে। সর্বনিম্ন ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড ফ্রিকোয়েন্সিতে মেট্রোরেল চলাচল করবে। এমআরটি লাইন-১ এর পাতাল রেলের সর্বোচ্চ পরিচালন গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার এবং উড়াল মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ পরিচালন গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাতাল রেল চালু হলে অল্প সময়ে অধিক সংখ্যায় যাত্রী পরিবহণ করা সম্ভব হবে। ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমবে। জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার কম হবে। যানজট অনেক কমবে। ঢাকা মহানগরীর জীবনযাত্রায় ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ হবে। মহানগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। সাশ্রয়কৃত কর্মঘণ্টা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করা যাবে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম