Wednesday 02 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কিডনি ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপনে আইন সংশোধন প্রয়োজন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ মার্চ ২০২৫ ১৫:৪৭ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ১৭:২৮

ঢাকা: কিডনি অ্যাওয়ার্নেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ বলেছেন, কিডনি রোগ নিরাময়ে সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই। আর যারা কিডনি রোগি আছেন, চিকিৎসা নিতে গিয়ে তাদের নানান জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনে আইন সংশোধন প্রয়োজন।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ক্যাম্পস আয়োজিত ‘কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ” শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ডা. সামাদ জানান, কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক, পরিণতি ভয়াবহ হলেও কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য। কিডনি রোগের হার ব্যাপক। বিশ্বে শুধু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা সিকেডি রোগীর সংখ্যা ৮৫ কোটির অধিক। এই রোগের হার দিন দিন বাড়ছে। উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে এই রোগের হার অনেক বেশি। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ। যদি কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা না করা যায় তবে কিডনি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়, যার চিকিৎস্য ব্যয় অত্যন্ত বেশি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি বিকল হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করে। আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ আকস্মিক কিডনি বিকলে আক্রান্ত হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ১৯৯০ সালে কিডনি রোগ ছিল ১৯তম স্থানে। বর্তমানে এসেছে ৭ম স্থানে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে দাড়াবে ৫ম স্থানে।

শিশুদের কিডনি সমস্যার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম বলেন, বাচ্চাদেরও কিডনি রোগ হয়। এর জন্য দরকার প্রথম সচেতনতা। অপরিণতভাবে জন্ম নিলে তার কিডনিও অপরিনত হয়। যা পরে বিকল হয়। বাচ্চাদের ডায়ালিসিস মাত্র কয়েকটা সেন্টারে আছে। দেশে ১৮ শতাংশ ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয় শিশু, এর ভেতর ২৫ ভাগেরই কিডনি বিকল থাকে। এক্ষেত্রে জন্মের পর থেকেই সচেতন ভাবে চিকিৎসা নিলে এই ঝুঁকিটা কম থাকে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সদস্য সচিব সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহাদ হাসান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার দেশে পর্যাপ্ত ডায়ালাইসিস সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশে সরকারিভাবে ৩০ জায়গায় ডায়ালাইসিস এর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ডায়ালাইসিসের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক নাই, নার্স নাই। ডায়ালিসিস করার আগে জনবল বাড়াতে হবে। দেশে ডায়ালাইসিস করার জন্য সরকারি পর্যায়ে ৯০, বেসরকারি পর্যায়ে ৩০০ জন চিকিৎসক রয়েছেন। যা একেবারেই অপ্রতুল।

কিডনি রোগ চিকিৎসা ব্যয়বহুল উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, কিডনি ৭০ থেকে ৯০ ভাগ নষ্ট হওয়ার অ্যগে অনেক ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ দেখা দেয় না। তাই এই রোগকে বলা হয় নীরব ঘাতক। দ্বিতীয় কিডনি রোগ অন্য রোগের ঝুঁকি অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়। এই জন্য কিডনি রোগকে বলা হয় ডিজিজ মাল্টিপ্লাইয়ার। কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে তার চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে আমাদের মত দেশের শতকরা ১০ ভাগ লোকও তা বহন করতে পারে না। ফলে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কিডনি বিকল রোগী অকাল মৃত্যুবরণ করে। চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবার দেউলিয়া হয়ে যায়।

প্রতিরোধের উপায়ের বিষয়ে তারা বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় সুপ্ত কিডনি রোগ নির্ণয় করে তা চিকিৎসা করা। যারা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছে তাদের মাত্র দুটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায়, একটি প্রস্রাবে প্রোটিন যায় কি না। অন্যটি রক্তের ক্রিয়েটিনিন থেকে ইজিএফআর নির্ণয় করে কিডনি শতভাগে কত ভাগ কাজ করছে তা নির্ণয় করা যায়। এই দুটি পরীক্ষা প্রাথমিক পর্যায়ের হাসপাতালেও করা যেতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বংশে কিডনি রোগ আছে, ধূমপায়ী, মাদকসেবী, অতিরিক্ত ওজন, বেশিদিন ব্যথার বড়ি খেয়েছে, বারে বারে কিডনিতে পাথর বা মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ হয়। শিশুকালে কিডনি রোগ থাকলে। এমনকি বয়স ৫০ এর উপরে গেলে কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের বছরে অন্তত দুইবার কিডনি পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে জটিলতার কারণ ‘অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯’- এই আইনে শুধুমাত্র বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে, চাচা, ফুপু, মামা, খালা, স্বামী ও স্ত্রীকে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে কিডনি ডোনার হিসেবে। এই ১২টি সম্পর্কের বাইরে আর কারও কাছ থেকে কিডনি নিতে পারবেন না অসুস্থ ব্যক্তি।

সারাবাংলা/এমএইচ/আরএস

কিডনি রোগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর