বৈরি পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে জাপা
১১ মার্চ ২০২৫ ১৭:০২ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ১৮:০২
ঢাকা: নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকে জাতীয় পার্টি (জাপা) ঠিকমতো উঠে দাঁড়াতে পারেনি। গত ৩৫ বছর ধরে নিজেদের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। গত ১৫ বছর জাতীয় সংসদের বিরোধী দলে থেকেও জাতীয় পার্টি নিজেকে শক্তিশালী করতে পারেনি। বরং দল ভেঙ্গে দুই ভাগ হয়েছে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায় দলটি ভেঙ্গে তিন ভাগ হয়। এরশাদের মৃত্যুর পর দলটি ভেঙ্গে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। মূল দলের নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের ওরফে সেলিম। আর অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা চুপচাপ রয়েছে। আর জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি দলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক কর্মসূচি দিয়ে সামনে এগোতে চাইলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার রোষানলে পরে অনেকটা চুপসে গেছে। তবে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান বৈরী পরিবেশ থেকে উত্তরণে কূটনৈতিক শক্তির ওপর ভর করেছে দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকাস্থ পাকিস্তানী কূটনৈতিক মিশন ছাড়া সকল দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এছাড়া জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে সার্বিক বিষয় নিয়ে একটি লিখিত ফিরিস্তি দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাশরুর মাওলা জানান, জাতীয় পার্টি দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে ঢাকাস্থ বিদেশী মিশনগুলোর কর্ণধারদের সঙ্গে বৈঠক অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনের বিষয়সহ জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কাজে বাধাসহ নানা বিষয় নিয়ে জাতিসংঘের কাছে একটি ফিরিস্থি দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করা কথা রয়েছে।
দলটির অন্য একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদল জাতীয় পার্টি নিজ দলকে শক্তিশালী করতে পারেনি। ওই সময় আওয়ামী সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে স্বাধীনভাবে রাজনীতিও করতে পারেনি। দলটির কয়েকজন নেতার দালালীর কারণে জাপা’র দলীয় সিদ্ধান্তসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো আওয়ামী লীগ। এমন কী জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যও সংসদ নেতাকে দেখিয়ে তারপর উপস্থাপন করা হতো। জাপা যাদের-ই ক্রীড়ানক হিসেবে কাজে লেগেছে, তারাই দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা দলীয় কর্মসূচি নিয়ে সামনে এগোতে পারছে না।
এদিকে, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে জাতীয় পার্টি পূর্ণ সমর্থন দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাপাও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় পরামর্শের জন্য সেনাবাহিনীর ডাক পায়। কিন্তু গত ১৫ বছর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করা জাপা ধীরে ধীরে সেই জায়গা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে তাদের ডাকা হয় না। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। এতে জাপার সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সেই দূরত্ব এখনো ঘোচেনি। এরই মধ্যে তারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল গোছাতে মাঠে নেমেছে।
সূত্র বলছে, গত প্রেসিডিয়াম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের অতিরিক্ত মহাসচিবরা বিভাগীয় শহর সফর করবেন। এ সময় তারা জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করতে বর্ধিত সভাসহ নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীও খুঁজবেন। এ সময় তারা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবেন। কিন্তু দলের এ সিন্ধান্তও ভেস্তে গেছে।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, জাতীয় পার্টির নীতি নির্ধারকদের লক্ষ্য হচ্ছে- আগামী নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করা।
দলের শীর্ষ নেতাদের দাবি, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা হলে জাপা একক শক্তিতে ভোটের মাঠে সাড়া জাগাবে। তাদের প্রার্থীর প্রস্তুত রয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস