ঢাকা: রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে ডিএমপির উত্তরখান থানা-পুলিশ। মামলা রুজুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে দুই হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মুহিদুল হক এ সব তথ্য তুলে ধরেন।
গ্রেফতাররা হলেন, মো. নাজিম হোসেন (২১) ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি (২৩)।
এর আগে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে ফরিদপুর রেলষ্টেশন এলাকা হতে ফরিদপুর সদর থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরপরই ভিকটিমের ফ্ল্যাট হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো বটি, একটি ধারালো চাকু ও রক্ত মাখা জামা-কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জব্দ করা হয়।
উত্তরখান থানা সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১০ মার্চ) রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ছয় তলা বিল্ডিংয়ের ৪র্থ তলার ৬ নম্বর ফ্ল্যাটে খুন হন। এ খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ভিকটিম সাইফুর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় তার স্ত্রীর পৈত্রিক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গত ৩/৪ মাস ধরে সেই এলাকার একটি বাসায় ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতেন।
সোমবার (১০ মার্চ ) বিকেলে বাদী সংবাদ পান তার বড় ভাইকে অজ্ঞাতানামা ব্যক্তিরা ধারালো অস্ত্র দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তার শয়ন কক্ষের ভেতর ফেলে রেখেছে। উল্লেখ্য, স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসারত অবস্থায় সকাল ৭টার দিকে তিনি মারা যান। উত্তরখান থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করে ও ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠায়।
থানা সূত্র আরও জানায়, মামলাটি রুজুর পর ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১২ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে উত্তরখান থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে ফরিদপুর রেলষ্টেশন এলাকা থেকে ফরিদপুর সদর থানা-পুলিশের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে দুটি মোবাইলফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার মো. নাজিম হোসেন (২১) ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি (২৩)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার ২/৩ দিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে ভিকটিম মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্রেফতার মো. নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতির পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার সুবাধে ভিকটিম গ্রেফতারদের তার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া রুপা বেগম ওরফে জান্নাতিকে তার ফ্ল্যাটে আটক করে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করে। গ্রেফতাররা নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত রাগ ও ক্ষোভ থেকে সোমবার (১০ মার্চ) রাতে ধারালো বটি দিয়ে মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে উপযুর্পরী আঘাত করে। আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারদের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: