ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
চমেক হাসপাতালে শত, শত রোগীর ভোগান্তি
১২ মার্চ ২০২৫ ১৫:৩২ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ১৬:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি বিভাগেও স্বাভাবিক সেবা মিলছে না। এতে দূর-দূরান্ত থেকে শত, শত রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। ছবি: সারাবাংলা
তবে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম সীমিতভাবে চালু আছে। সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া অন্যরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
বুধবার (১২ মার্চ) ভোর থেকে প্রতিদিনের মতো রোগীরা চমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসতে থাকেন। সকাল গড়াতেই শত, শত রোগীর ভিড় জমে যায়। কিন্তু বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রথমে অনেক রোগী হতচকিত হয়ে পড়েন। পরে আস্তে আস্তে জানা যায়, চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এরপরও চিকিৎসার আশায় রোগী ও তাদের স্বজনরা বহির্বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে আছেন।

সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে রোগীরা। ছবি: সারাবাংলা
গৃহিণী মর্জিনা বেগম এসেছেন কক্সবাজার থেকে। তার শরীরে টিউমার অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন মর্জিনা ও তার মা তৈয়বা বেগম।
মর্জিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজকে (বুধবার) টিউমার অপারেশনের কথা ছিল। গত সোমবার এসেছিলাম। তখন কিছু পরীক্ষা দিয়েছিল। বলেছিল, আজ (বুধবার) রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে দেখাতে। আজ রিপোর্ট নিয়ে এসে দেখি কাউন্টার থেকে টিকিটই দিচ্ছে না। সকাল ৭টায় এসেছি। আমাদের বেশি হয়রানি করা হচ্ছে। এভাবে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না। এর আগে তিনদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। একটা প্যারাসিটামলও দেয়নি।’
তৈয়বা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘একবার কক্সবাজার আসতে-যেতে দুইজনের এক হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়। আমরা গরীব মানুষ। না হলে ক্লিনিকে নিয়ে অপারেশন করে ফেলতাম, সরকারি হাসপাতালে আসতে হতো না। এভাবে হয়রানি করা হলে আমরা যাব কোথায় ?’
কন্ঠনালীতে সমস্যা নিয়ে কর্ণফুলী উপজেলা থেকে আসা আব্দুল হক বেলা ১২টার দিকে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বসে আছি। টিকিট দিচ্ছে না। ডাক্তারদের দেখছি না। নার্সদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে ডাক্তার না দেখলে আমরা কী করবো।’
রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা হৃদরোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ আনিসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধর্মঘটের কথা যদি আগে আমাদের বলে দিত আমরা আসতাম না। কেউ কোনো কথা বলছে না। ধর্মঘট চলছে, সেটাও কেউ বলছে না। রোজা-রমজানের দিন, কত কষ্ট করে এসেছি। একবার আসতে-যেতে ৮০০ টাকা গাড়িভাড়া চলে যায়।’
পায়ে ফ্র্যাকচার নিয়ে নগরীর আতুরার ডিপো এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা জিসান সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আউটডোরে টিকিট কাউন্টার বন্ধ। ডাক্তাদের কাউকে দেখছি না। এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাসপাতালের বহির্বিভাগে সমস্যা হচ্ছে। সেখানে রোগীদের পুরোপুরি চিকিৎসা সেবা দেয়া যাচ্ছে না। তবে জরুরি বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটে সেবা চালু আছে। সিনিয়র ডাক্তাররা সেবা দিচ্ছেন স্বাভাবিকভাবে। আইসিইউ সেবাও চালু আছে।’

সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। ছবি: সারাবাংলা
এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া কাউকে নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে না দেওয়াসহ পাঁচদফা দাবিতে সারাদেশে একযোগে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। চট্টগ্রামে তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মেরিন সিটি এবং সাউদার্ন মেডিকেলের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও এ কর্মসূচি পালন করছেন।
তবে দুপুরে এ সংক্রান্ত রীটের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে, এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি) ও বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।
সারাবাংলা/আরডি/এমপি