‘জুলাইয়ের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব, ডিসেম্বর কেন?’
১২ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫৪ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ১৬:৩৯
ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, জুন—জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারেন। তাহলে বিলম্ব কেন, ডিসেম্বরই বা কেন, কেন জুলাই নয়?
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্প্রতি শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই প্রথম ৩১ দফা প্রস্তাবনার উপস্থাপন করেছিলেন। বিএনপির নেতা—কর্মী সহকর্মী ভাইবোনেরা এই ৩১ দফা সম্পর্কে জেনেছেন। এই ৩১ দফাকে রূপ দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছেন তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ সংস্কার কার্যক্রমকে কেউ বাতিল বলে ঘোষণা করেনি। কোন রাজনৈতিক দল এমনকি জামায়াত বা অন্য কোন ইসলামিক দলও এই কার্যক্রমকে চ্যালেঞ্জ করেনি। কেউ বলেনি এই সংস্কার কার্যক্রম আমরা মানি নাই, মানবো না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশ নেতা তারেক রহমান দেশকে নিয়ে ভাবেন। এই ৩১ দফা সেই দেশপ্রেমেরই প্রমাণ। এখন পর্যন্ত কেউ এই ৩১ দফা নিয়ে ভালো ছাড়া খারাপ বলে নাই।’
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সংস্কার কর্মসূচি চলমান অন্তর্বর্তী সরকারের। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে নতুন কিছু নেই। সুতরাং সংস্কার করে নির্বাচন পেছানো জনগণের ভাবনা অমূলক নয়।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘জুন জুলাইয়ের মধ্যে আপনারা নির্বাচন দিতে পারেন। যদিও আপনারা বলেছেন যে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। কিন্তু ডিসেম্বর কেন? কেন বিলম্ব? এই নির্বাচন জুন জুলাইয়ের মধ্যেই করা সম্ভব। আপনারা কতদিনে সংস্কার করবেন? যতটুকু সংস্কার পারেন করেন বাকিটা যে আসবে সে করবে। অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে যে দল আসবে সেই দল বাকি সংস্কারের কাজগুলো করবে। আজ যখন নির্বাচনের সময় এসেছে তখন আপনারা বলছেন এটা না করলে নির্বাচন হবে না সেটা না করলে নির্বাচন হবে না। তাই সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুত নির্বাচন দিন।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কিছু লোভী রাজনৈতিক দল আছে যারা শুধু বিরোধিতাই করে যায়। কারণ তাদের মধ্যে দেশ প্রেম নাই। নির্বাচনে আসুন। নির্বাচন ভয় পান কেন? ১৭ বছরে বহু নেতাকর্মীর ফাঁসি হয়েছে গুম হয়েছে খুন হয়েছে। এক মাসে আমাদের ৪২২ জন নেতাকর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশটাকে বাপের তালুক ভেবেছিল। দেশটা কারো বাপের তালুকদারির জন্য নয়। আপনারা কথা বে-হিসেবি করে বলবেন না। আমরাও বেহিসাবে কথা বলতে পারি। কিন্তু আমাদের প্রেসিডেন্ট শহিদ জিয়াউর রহমান আমাদেরকে বেহিসাবি কথা বলা শেখায়নি। তাই আপনারা সতর্ক হয়ে কথা বলবেন।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘একটা দল আছে যারা চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য দুষ্কর্ম করে কিন্তু দোষ দেয় বিএনপিকে। যদি জনগণের মন থেকে উঠে যান, তাহলে আর তাদের মনে ঠাঁই পাবেন না।তাই সাবধান হয়ে কথা বলুন। দুইজন চাঁদাবাজদের জন্য বা দুইজন কর্মীর অপকর্মের জন্য পুরো দলের দোষ হবে সেটা হতে পারে না । তাই এদেরকে চিহ্নিত করুন এবং চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেন। বিএনপিতে কোন অপকর্মকারি বা কোন চাঁদাবাজিদের জায়গা হবে না। কোন খারাপ লোকের জায়গা বিএনপিতে হবে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, একটি প্রবাদ বাক্য আছে— ‘‘সব পাখি মাছ খায়, কিন্তু দোষ হয় মাছরাঙ্গা পাখির।’ বিএনপি সম্পর্কে বলা খুব সহজ বললে তাদের ভালো হয়। বিএনপি একটি বড় দল গোছানো দল, এই দলকে নিয়ে সমালোচনা করতে সবার ভালো লাগে। এদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের জনগণের পাশে থেকে জনগণের জন্য কাজ করে প্রমাণ করতে হবে যে, জনগণের জন্য বিএনপি ছাড়া আর কেউ নাই। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রমাণ করেছিলেন যখন এই দেশ থেকে সমস্ত লোক পালিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে যায় ৭১ সালে। তখন জিয়াউর রহমান এই দেশের মাটিতে থেকে যুদ্ধ করেছিলেন। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় নাই।’’
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ইউসুফ বিন জলিল কালু, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ আহমেদ মিলন, কৃষক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হারুন শিকদার, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক।
সারাবাংলা/এফএন/এমপি