Wednesday 12 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেখানে যেভাবে আছেন হারুন-সানজিদা-মামুন

উজ্জল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ মার্চ ২০২৫ ২৩:৪৮ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ২৩:৫৪

হারুন অর রশিদ, সানজিদা আফরিন, আজিজুল হক মামুন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: রমনা বিভাগের সাবেক এডিসি হারুন অর রশিদ ওরফে এডিসি হারুনের নাম শুনলে পল্টন শাহবাগ এলাকায় বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খেত। যেকোনো প্রকার আন্দোলন মানেই দমন করতে মাঠে নামতেন হারুন। তার দমন প্রক্রিয়ায় পড়ে অনেকের অবস্থা কাহিলও হয়েছে। অথচ এখন প্রতিদিন কোনো না কোনো আন্দোলন হচ্ছে; কিন্তু সেই আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তারা। এ কারণে অনেকেই বলছেন, এডিসি হারুনের মতো পুলিশ অফিসার দরকার।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি শাহবাগ, জাতীয় প্রেস ক্লাব পল্টন এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল এলাকায় আন্দোলন চলাকালে জিম্মি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এ রকম মন্তব্যই পাওয়া গেছে। তবে আরেক অংশ বলছে, হারুন পুলিশ অফিসার হিসেবে একেবারেই অমানবিক ছিলেন। তার কোনো দয়া-মায়া ছিল না। তিনি দোষী-নির্দোষ সবাইকে অমানুষিক নির্যাতন করতেন। তিনি নির্দয় মানুষের মত আচরণ করতেন। এরকম অফিসার বিদায় হয়েছে, মানে ভালো হয়েছে।

হারুন-সানজিদা কাণ্ডের পর প্রথমে হারুনকে বদলি করা হয় রংপুর রেঞ্জ পুলিশে। এর পর সেখান থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় আনা হয়। ৫ আগস্টের পর তাকে ওএসডি করা হয়। একই ঘটনায় ডিএমপির এডিসি সানজিদাকে প্রথমে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হলেও তিনি সেখান যোগদান না করায় ডিএমপিতেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর তাকেও ওএসডি করা হয়। একই কারণে রাষ্ট্রপতির সাবেক এপিএস মামুনকে (সানজিদার স্বামী) কোনো প্রকার শাস্তি দেওয়া না হলেও ৫ আগস্টের পর তাকেও ওএসডি করা হয়।

পুলিশ সূত্র বলছে, ওএসডি হওয়ায় তিনজনই ঢাকাতেই রয়েছেন। এডিসি সানজিদা ও হারুন নিয়মিত পুলিশ কমান্ড সেন্টারে গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসেন। অন্যদিকে, এপিএস মামুন ওএসডি হয়ে ঢাকাতেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। আর পুলিশ বলছে, মামুন আর সানজিদা এখন একসঙ্গেই রয়েছেন।

এডিসি সানজিদার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এডিসি সানজিদা বর্তমানে ওএসডি অবস্থায় আছেন। তিনি ডিএমপির কোনো বিভাগেই দায়িত্বে নেই।’

এডিসি হারুনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া ) ইনামুল হক সাগর সারাবাংলাকে বলেন, ‘হারুন অর রশিদ সবশেষ রংপুর রেঞ্জে চাকরি করেছেন। এর পর তাকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় আনা হয়। সবশেষ তাকে ওএসডি করা হয়েছে। তিনি এখন নিয়মিত হাজিরা দিয়ে চলে যাচ্ছেন।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন:

রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে সাবেক এপিএস আজিজুল হক মামুনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাবেক এপিএস মামুন এখনো ওএসডি অবস্থায় আছেন। তিনি এখন তার স্ত্রীর সঙ্গে একই বাসায় থাকছেন।’

২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা কক্ষে হারুনকে সানজিদা আফরিনের সঙ্গে আবিষ্কার করে সাবেক এপিএস আজিজুল হক মামুন। তখন হারুনের সঙ্গে মারামারিতে জড়ায় মামুন। তখন হারুন শাহবাগ থানায় ফোন করে পুলিশ এনে মামুনের সঙ্গে থাকা তৎকালীন ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত) নেতাদের থানায় নিয়ে গিয়ে বেদম প্রহার করে। এমনকি ওই সময় দুই ছাত্রলীগ নেতার দাঁত প্লাস দিয়ে আঘাত করে ভেঙেও দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর ১০ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে হারুনকে প্রথমে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগ থেকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) উত্তর বিভাগে বদলি করা হয়। পরে পুলিশ সদর দফকর থেকে আরেক প্রজ্ঞাপনে এডিসি হারুনকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বদলি করা হয়। এর একদিন পর ১১ সেপ্টেম্বর আরেক প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।

২০২৪ সালের ২৬ জুলাই হারুনের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পর তাকে ঢাকায় আসতে বলা হলেও তিনি আসেননি। তখন ঢাকাসহ সারাদেশে বৈষম্যবিরোধীদের আন্দোলন তুঙ্গে। এর এক সপ্তাহ পরেই ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট সবাই গা ঢাকা দিলেও হারুন রংপুরেই থেকে যান। এর পর সেপ্টেম্বর মাসে আরেক প্রজ্ঞাপনে তাকে ওএসডি করা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন এডিসি হারুন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়া ও আন্দোলনকারী শিক্ষকদের পিটুনি ছাড়াও সহকর্মীকে থাপ্পড় মেরেও সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলন চলাকালেও তিনি শিক্ষকদের বেপরোয়া হন এবং মারধর করেন। সর্বশেষ তার মারধরের শিকার হন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত) দুই কেন্দ্রীয় নেতা।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

ওএসডি মামুন সানজিদা হারুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর