ঢাকা: আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের মধ্যম ও নিম্ম স্তর একত্রিত করে খুচরা মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। একইসঙ্গে ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভার প্রচলন করা এবং জর্দা ও গুল এর কর ও দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। একইসঙ্গে তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংগঠনগুলো।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে ‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকরা। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী দুইটি কর্মশালা সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাকপণ্য সস্তা এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরও সস্তা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের সূত্রানুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর দেশের এই ৭টি মহানগরীর নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬-১৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ক্ষতিকর পণ্য ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
তাই আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা, উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা উচিত। আর সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা। এদিকে বিড়ির ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এ ছাড়া সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার সুপারিশ করেন আলোচকরা।
তারা বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট সতেরো লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের ও মো. হাসান শাহরিয়ার।