১৪ মার্চ ১৯৭১
মাঝিমাল্লার বৈঠা হাতে রাজপথে নামে বাঙালি
১৪ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ০৮:২০
ঢাকা: ১৯৭১ সালের ১৪ মার্চ। এদিন মাঝিমাল্লার বৈঠা হাতে রাজপথে নেমে আসে বাঙালি। সামরিক আইনের ১১৫ ধারা জারির প্রতিবাদে বেসরকারি কর্মচারীরাও সেদিন বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। দেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সরকারের দেওয়া ‘হেলাল ইমতিয়াজ’ খেতাব বর্জনের ঘোষণা দেন।
একাত্তরের আজকের দিনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসার ব্যাপারে শর্তারোপ করেন। তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্ট দাবি পূরণের ইচ্ছা নিয়ে আলোচনায় বসতে চান, তাহলে আমি বসতে পারি। তবে কোনোভাবেই তৃতীয় কোনো পক্ষ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবে না।’
অন্যদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের দেওয়া ছয় দফা দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তবে ঢাকায় এসে তার সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিন নেপালি নেতা খান আব্দুল ওয়ালি খান পূর্ব পাকিস্তান সফরকালে শেখ মুজিবের সঙ্গে একান্ত আলোচনা করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাঙালির আন্দোলন এবং তাদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে তার।
রাতে এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব সবাইকে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ৩৫ দফা নির্দেশনা জারি করেন।
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের এক সমাবেশ থেকে দেশের সাত কোটি জনতাকে সৈনিক হিসেবে সংগ্রামে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আগের দিনের জারি করা সামরিক ফরমানের প্রতিবাদের ঢাকায় মিছিল করেন প্রতিরক্ষা দফতরের বেসামরিক কর্মচারীরা। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সম্পদ পাচার রোধের অংশ হিসেবে ঢাকার কয়েকটি স্থানে চেকপোস্ট বসায়। চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ সারা শহরে মিছিল করে।
এদিকে ১৪ মার্চ করাচিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো এক সমাবেশে এক পাকিস্তান ও দুই অঞ্চলে দুই দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে একটি ‘ফর্মুলা উদ্ভাবনের’ প্রস্তাব দেন। আর ঢাকার পত্রিকাগুলো একটি যৌথ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল- ‘আর সময় নেই’; ‘Time is Running Out’।
এভাবেই একাত্তরের মার্চে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবাই মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করে।
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম