Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এখন নাটকের সবচেয়ে বড় সমস্যা বাজেট’


২৩ জুন ২০১৮ ১৬:৪৪

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

সাগর জাহান নাটকের কারিগর। ফ্রেমে ফ্রেমে গল্প বলতে ভালোবাসেন তিনি। গোছানো গল্পে তিনি নির্মাণ করেছেন একাধিক নাটক। পরিচালনার পাশাপাশি নাটক রচনায়ও তার পারদর্শিতা রয়েছে। দুই জায়গাতেই পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। তিনি নিজেকে ইতিবাচক মানুষ মনে করেন। পছন্দ করেন তরুণ নির্মাতাদের কাজ। তার মতে, তরুণরা পারবে দেশের নাটককে নতুন যুগের সূচনা এনে দিতে। সারাবাংলার সাথে আলাপকালে তিনি তরুণদের জয়গান গেয়েছেন। কথা বলেছেন বাংলাদেশের নাটক, নাটকের মান এবং নিজের নির্মিতব্য চলচ্চিত্র নিয়ে।


  • ঈদের প্রাচারিত নাটক থেকে কেমন সাড়া পেলেন?

আমি খুব চিন্তায় ছিলাম, কারণ দর্শক খেলার মাঝে মাঝে নাটক দেখবে কিনা! কিন্তু মানুষ নাটক দেখেছে। আমাদের বাংলাদেশের মানুষ নাটক দেখতে অনেক ভালোবাসেন। ঈদ মানে এখনও নাটক দেখা। খুব বেশি বিনোদনের মাধ্যম তো আমাদের নেই, পার্ক, রেস্তোরা ছাড়া। তাই ঈদে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন নাটকের চাহিদা থেকেই যায়। এবার শুধু আমার নাটক না, অন্যান্য নির্মাতাদের নাটকও দেখেছে দর্শক। আরও একটি কারণে বেশ টেনশনে ছিলাম। কারণ বাংলাভিশনের যে চাঙ্কে জনপ্রিয়তা পাওয়া আরমান ভাই, সিকান্দার বক্স, অ্যাভারেজ আসলাম নাটকগুলো প্রচার হয়েছে সেই চাঙ্কেই এবার ‘ফ্যাটম্যান’ নাটকটি প্রচার হয়েছে। দর্শকরা নতুন এই নাটক কিভাবে নেয়। কিন্তু দর্শকরা খুব ভালোভাবে নাটকটি গ্রহণ করেছেন। ‘ফ্যাটম্যান’ নিয়ে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।

  • নিজের নাটক ছাড়া অন্য কোন নির্মাতার নাটক দেখা হয়?

আমি নিজের নাটক কম দেখি। অন্য নির্মাতার নাটক দেখি বেশি। বিশেষ করে তরুণ নির্মাতাদের নাটক খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি। তরুণরা এদেশের নাটককে অনেকদূর নিয়ে যাবে। ওদের নাটক দেখে উৎসাহিত করা আমাদের কর্তব্য।

  • নাটকের মান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। নাটকের মান কমে যাওয়ার কারণ কি বলে মনে করেন?

এখন ইন্ডাস্ট্রি এক ধরনের অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নাটকের মান খারাপ হওয়ার দায়ভার শুধুমাত্র পরিচালদের উপর দিলে হবে না। কবে থেকে কিভাবে নাটকের এই খারাপ অবস্থার শুরু হয়েছে সেটা আগে বের করে সমাধান করার পদক্ষেপ নিতে হবে। একজন নাট্যকারকে গত কয়েক বছর ধরে শুধু পা রেখে বাকিটা কেটে ফেলা হয়েছে। তাকে বলা হয়, দুইজন শিল্পী নিয়ে নাটক লেখেন। বাবা-মা রাখবেন না। অনেক বেশী আউটডোর লিখবেন না। গল্প ভাবনা বিস্তৃত হবে না। এমন হলে একজন নাট্যকার কিভাবে ভালো নাটক লিখবে? কিভাবে মান বজায় থাকবে? তারপর যখন একজন ডিরেক্টর সেই চিত্রনাট্য পায় তখন তার খুব বেশী ভালো করার সুযোগও থাকে না।

  • বাজেটের কারনে কি এমনভাবে চিত্রনাট্য লিখতে বলা হয়? 

নাটকে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বাজেট। দেড়-দুই লাখ টাকায় নাটকের বাজেট ধরিয়ে দেয়া হয়। চ্যানেলগুলো নাটকের দাম দিতে চায় না। তারা খুব কম মূল্যে নাটক ক্রয় করতে চায়। যা এই সময়ে এসে অপ্রত্যাশিত। অথচ আমরা একটা সময় বেশী দামে নাটক বিক্রি করেছি। তখন কিন্তু নাটকের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতেন না। তখন বাজেট ভালো ছিলো বিধায় নাটক ভালো হতো।

  • একদিকে নাটকের বাজেট কমছে অন্যদিকে শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়ছে। এই অবস্থায় তাদের বাজেট বাড়ানো কতোটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন?

এটা খুব বড় ব্যাপার না। যার যেটা প্রাপ্য সে সেটা নিবে। এটিই বাস্তবতা। মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়ছে। পৃথিবীর সব বড় বড় অভিনেতারা পারিশ্রমিক বাড়িয়ে থাকেন। বলিউডের অমিতাভ বচ্চন কিংবা বাংলাদেশের প্রয়াত হুমায়ূন ফরিদী ক্যারিয়ারের শুরুতে যে পরিশ্রমিক নিতেন পরবর্তীতে তারা সেই পারিশ্রমিক নেন নি। আবার জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীসহ আরও যারা আছেন যোগ্যতার ভিত্তিতে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত নয়।

  • এতো এতো অভিযোগ। তাহলে নির্মাতারা কেনো নাটক নির্মাণ করছেন?

এখানে পরিচালকরা শুধুমাত্র টাকা আয় করার জন্য আসেন না। পরিচালনা একটি নেশার মতো। পরিচালকরা হলেন সৃষ্টিশীল মানুষ। তারা সৃষ্টির নেশায় বুদ থাকে। শত প্রতিকূলতার মধ্যে তারা নতুন কিছু সৃষ্টি করে মানুষকে বিনোদিত করতে চায়। যাদের চিন্তায় চেতনায় সবসময় ফ্রেম খেলা করে তারা নির্মাণ থেকে দূরে থাকতে পারে না বিধায় নাটক নির্মাণ করছে। এটাকে তাদের দূর্বলতা ভাবা ভুল হবে।

  • এর সমাধানের পথ কি?

টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আমাদের সবাইকে নিয়ে বসতে হবে। নাটকের মান, নাটকের অবস্থা এবং নাটককে নির্ভর করে আমরা যারা জীবিকা নির্বাহ করছি সেই মানুষগুলোর পরিবর্তন আনতে হলে পেশাদারি মনোভাব তৈরী করতে হবে। নীতিমালার আওতায় আনতে হবে।

এখন ইউটিউবে নাটক আপলোড করা হয়। নাটকগুলোর কোন কপিরাইট আমরা পাই না। টেলিভিশন চ্যানেল পায়। আমার সৃষ্টির স্বত্ত্ব আমি পাই না। ইউটিউব থেকে যে আয় হয় সেটা থেকে কিছুই প্রযোজক পায় না। প্রযোজক যদি টাকা ফেরত না পায় তাহলে কিসের লোভে তারা অর্থলগ্নি করবে? তারা তো প্রথম নাটক করার পর আর নাটক নির্মাণে আগ্রহী হবেন না।

  • ইউটিউবের প্রসঙ্গ যখন আসলো তখন একটি প্রশ্ন চলে আসে। এখন টেলিভিশনে নাটক প্রচারের পরপর ইউটিউবে চলে আসছে। বিষয়টি টেলিভিশন নাটকের ক্ষেত্রে কতোটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে?

প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে হলে এটা করতেই হবে। বাংলাদেশের প্রায় এককোটি মানুষ প্রবাসে থাকে তারা কাজের জন্য ঠিক সময়ে নাটক দেখতে পারে না। পরে সময় সুযোগ মতো নাটক দেখে। তাদের জন্য হলেও এটা ইতিবাচক। আসলে চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপনের কারণে ইউটিউবমুখী হচ্ছে। বিজ্ঞাপন যদি কমিয়ে দেয়া হয় তাহলে ইউটিউব কখনওই জনপ্রিয় হতে পারবে না। টেলিভিশনে নাটক দেখার মজা অন্যরকম। আশার কথা হলো এবার কিছু চ্যানেল বিজ্ঞাপন কমিয়ে নাটক প্রচার করছে।

  • কয়েক বছর ধরে চ্যানেলগুলো এজেন্সি নির্ভর হয়ে পড়েছে। কি বলবেন?

এজেন্সিকে আমি নেতিবাচকভাবে দেখছি না। পৃথিবীর সবদেশে এজেন্সি আছে। তবে আমাদের দেশের এজেন্সিগুলো যদি নাটকের মান নিয়ন্ত্রন করে নাটক নির্মাণ করতো তাহলে ভালো হতো নাটকের জন্য। আবার এজেন্সি সব নাটক বানাবে এটা ঠিক না। তাহলে অন্য প্রযোজকরা কি করবে? তাদের জন্যই আজকে আমাদের নাটক এতোদূর এসেছে। এজেন্সিগুলো যেভাবে চ্যানেলের সাথে যুক্ত হয়েছে সেটা ঠিক না। সঠিকভাবে নিয়ম মেনে যুক্ত হওয়া উচিত যেনে এজেন্সির বাইরের প্রযোজকরা অর্থলগ্নি করতে পারেন।

  • নাটক থেকে চলচ্চিত্রে আসি। আপনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেটার কি খবর? 

এখন বাংলাদেশের সিনেমার যা পরিবেশ তাতে সিনেমা বানিয়ে টাকা ফেরত আনা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। আমি এমন কোন সিনেমা বানাতে চাই না যেটা থেকে টাকা তুলে আনতে পারবো না। আমি চাই আমার প্রযোজক বাঁচুক। প্রযোজক বাঁচলে সিনেমা বাঁচবে। খুব তাড়াতাড়ি চিত্রনাট্য লেখার কাজ আরম্ভ করবো। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরের শেষের দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুতে কাজ আরম্ভ করবো।

সারাবাংলা/আরএসও/টিএস

বাংলা নাটক সাগর জাহান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর