১৫ মার্চ ১৯৭১
ঢাকায় ইয়াহিয়া, সর্বত্র উড়ছিল কালো পতাকা
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:০৯
ঢাকা: ১৫ মার্চ ১৯৭১। এদিন বেলা পৌনে ১১টার দিকে ধানমন্ডির বাড়ি থেকে শেখ মুজিবর রহমানের গাড়ি বের হয়। লাখো বাঙালি হত্যা’র প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শেখ মুজিব। এভাবে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে গত কয়েকদিনে এদেশে পাকসেনারা যা ঘটিয়েছে তার প্রতিবাদ। এবং আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান না এলে চূড়ান্তভাবে লাল-সবুজের বুকে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়বে।
বৈঠকটি শেষ হয় দুপুরে। শেখ মুজিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হবে। তবে ইয়াহিয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।’ এদিন নতুন নির্দেশ দেন তিনি। মুজিব বলেন, ‘এখন থেকে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিক্রয় কর গ্রহণ করবে। কিন্তু এসব কর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে জমা দেওয়া হবে না।’
এদিন মওলানা ভাসানী ময়মনসিংহের জনসভায় দাবি করেন বাংলাদেশের পাওনা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিন। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বুদ্ধিজীবীদের সভায় আবুল ফজল, সৈয়দ আলী আহসান, ড. আনিসুজ্জামান প্রমুখ অসহযোগ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন। সর্বত্র উড়ছিল কালো পতাকা। গড়ে উঠতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে রাজপথে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে নতুন সামরিক ফরমান জারির প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে সভা হয়। সেখানে বাংলাদেশ রক্ষায় সব নাগরিককে অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়। সভা শেষে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সংগ্রাম পরিষদের মিছিলটি কাকরাইল, বেইলি রোড হয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে। ইয়াহিয়া খান তখন ওই ভবনেই অবস্থান করছিলেন। ভবনের সামনে সামরিক বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিতি ছিল। পরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
চিকিৎসকরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত সভা থেকে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে প্রস্তুত হওয়ার জন্য জনতার প্রতি আহ্বান জানান। এদিন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের বিশাল সমাবেশ। অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মমতাজউদ্দিন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, সাংবাদিক নূর ইসলাম প্রমুখ।
নেত্রকোনায় সুইপার ও ঝাড়ুদাররা ঝাড়ু, দা, লাঠি ও কোদাল নিয়ে মিছিল করে। বগুড়া, খুলনা, রংপুর, লাকসাম, কুমিল্লা ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার পক্ষে মিছিল-সমাবেশ হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানে জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তান, ন্যাপ (ওয়ালী), মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) এবং পিডিপির নেতারা এক বিবৃতিতে ভুট্টোর ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্যে তাকেই দায়ী করেন।
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম