Sunday 16 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন হ্রাস: ডব্লিউএফপি’র পূর্বাভাসে খানি’র উদ্বেগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২৫ ১৭:১৮ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৮:২৬

ঢাকা: জরুরিভাবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পেলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য রেশন মাথাপিছু মাসিক ১২.৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে- বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এমন পূর্বাভাসে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি)।

রোববার (১৬ মার্চ) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, তহবিলের তীব্র সংকটের কারণে এ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বলে ডব্লিউএফপি জানায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, তহবিল ঘাটতি মোকাবেলা করতে, প্রয়োজনীয় সেবাগুলো পুনরায় চালু করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই সহায়তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্য রেশন কমানোর এই পদক্ষেপটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট তৈরি করতে পারে এবং এই জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণের এই অপরিহার্য সহায়তা ক্ষুন্ন হবে। এটি এমন একটি সময়ে ঘটছে যখন শরণার্থীরা ইতিমধ্যেই একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন এবং তহবিলের ঘাটতি ক্রমবর্ধমান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গারা জনাকীর্ণ শিবিরে বসবাস করছেন, যেখানে তাদের কাজ করার বা তার বাইরে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার আইনি অধিকার নেই। তারা সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল, যার কারণে এই সহায়তা বজায় রাখা শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, বরং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন অপুষ্টি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০১৭ এর পর ২০২৫ সালে এসে ক্যাম্পগুলোতে সর্বোচ্চ অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার হার ১৫% ছাড়িয়ে গেছে, এবং গুরুতর তীব্র পুষ্টিহীনতার ঘটনা ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারিতে ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, এর পর ফেব্রুয়ারিতে আরও ২৭% বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য রেশন পূর্ণভাবে বজায় রাখার জন্য এপ্রিল মাসে ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৮১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। খানি বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জরুরিভাবে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রদানের আহবান জানায়, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যায়।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের রাখান রাজ্যে ২০১৭ এর আগস্টে জান্তা সরকার ও রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষ চরমে উঠলে লাখো রোহিঙ্গা নাফ নদী হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই শক্তিশালী, দৃশ্যমান এবং পরিমাপযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যার মধ্যে সময়োপযোগী, নমনীয় এবং পর্যাপ্ত তহবিলের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। স্বেচ্ছাসেবী এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন সহ একটি টেকসই সমাধান অর্জন না হওয়া পর্যন্ত, শিবিরগুলোতে পুষ্টি এবং সামগ্রিক মানবিক অবস্থার আরও অবনতি রোধ করার জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। সাহায্য প্রচেষ্টাকে একটি টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতির দিকে স্থানান্তরিত করতে হবে যা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় সম্প্রদায় উভয়ের জন্য জীবিকা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং অর্থনৈতিক সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করে।

খানি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবাধিকার নিশ্চিত করতে, বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে যতদিন না তারা এই শিবিরে আছেন। যদি এমন পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিবিরে পাচার, গ্রেফতার বা সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় জীবনহানির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারে, যা ক্যাম্পের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, যথাযথ খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ নেয়ার সাথে সাথে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

সারাবাংলা/এফএন/আরএস

বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর