১৯ মার্চ ১৯৭১
জয়দেবপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ
১৯ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ০৩:৪৮
ঢাকা: ১৯ মার্চ ১৯৭১। এই দিন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ হয় জয়দেবপুরে। এদিন ঢাকা ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়দেবপুরের (গাজীপুর) দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। এ খবর জানাজানি হতেই বিক্ষুব্ধ জনতা জয়দেবপুরে এক প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করলে সেখানেই শহিদ হন অনেকে। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ।
সেদিন সেনাবাহিনীর গুলিতে শহিদদের মধ্যে ছিলেন- হুরমত, নিয়ামত ও মনু খলিফাসহ আরও অনেকে। ওই সময় বহুলোক আহত হন। বীর বাঙালির এই সশস্ত্র প্রতিরোধের কারণেই ব্যর্থ হয় জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা। এ দিন যারা শহিদ হয়েছিলেন তাদের স্মরণেই তৈরি হয়েছিল ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’।
জয়দেবপুরের ‘সংঘর্ষের’ খবর বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে যায় উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশে। স্লোগান ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর-সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু কর’। এদিন সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
জয়দেবপুরে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনীর গুলির তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ধ্যায় শেখ মুজিবর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যারা বুলেট ও শক্তি দিয়ে গণআন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন বলে ভেবেছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়।’
একদিন বিরতির পর এদিন ঢাকায় বেলা ১১টায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার তৃতীয় দফা একান্ত বৈঠক হয়। আর সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে হয় উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক। তৎকালীন আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এআর কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন। দুই ঘণ্টার বৈঠকে আলোচনার ‘টার্ম অব রোফারেন্স’ ঠিক করা হয়।
এদিনও শেখ মুজিবের বাড়িতে অনেক মিছিল যায়। সমবেতা জনতার উদ্দেশে শেখ মুজিব বলেন, ‘শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাঁচার ব্যবস্থা করে যাব।’
ন্যাপ প্রধান মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় সময় নষ্ট করছেন। ইয়াহিয়া খানের বোঝা উচিত, শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মনে রাখা উচিত যে, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন।’
করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলোর পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা এক বৈঠকে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোবিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো এদিন পশ্চিম পাকিস্তানে গণআন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে তার দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ক্ষমতার ব্যাপারে পিপলস পার্টিকে হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না।’ তিনি হুমকি দেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, এবার আপনারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শক্তি দেখবেন।’
ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা উত্তোলন অব্যাহত থাকে। সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম