Wednesday 19 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যথারীতি দম ফেলার ফুরসত নেই ‘জারদৌসি-কারচুপি’ কারিগরদের

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৯ মার্চ ২০২৫ ১০:২০ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ১০:৫২

চলছে শেষে মুহূর্তের প্রস্তুতি। ছবি: সারাবাংলা/শ্যামল নন্দী

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কাঠের ফ্রেমে টান টান করে আটকানো হয়েছে কাপড়। সেটার ওপরে নিপুণ হাতে পুতি, নলি, পাল, ভলিউম, সুতা ও জরি দিয়ে নানা নকশা তৈরি করতে ব্যস্ত ‘জারদৌসি ও কারচুপি’র কারিগররা। ঈদকে সামনে রেখেই কারিগরদের এ ব্যস্ততা। দিনরাত পরিশ্রম করে থ্রি-পিছ, সালোয়ার কামিজ, লেহেঙ্গা ও বোরকাতে ফুল, পাখিসহ নানা নকশা ফুটিয়ে তুলছেন তারা, মোটেও দম ফেলার ফুরসত নেই।

কারিগড়ের হাতে নকশা তৈরীর কাজ চলছে। ছবি: সারাবাংলা/শ্যামল নন্দী

চট্টগ্রাম নগরীর ঝাউতলা বাজার এলাকায় ‘বিহারীপল্লীতে’ গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।

বিজ্ঞাপন

ছেলেদের পাঞ্জাবি ও মেয়েদের শাড়ি-সালোয়ার কামিজে ব্যবহৃত বিশেষ নকশার জারদৌসিতে ধাতব সুতো ও ভারি নকশা বেশি ব্যবহৃত হয়, যা বেশ রাজকীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ। কারচুপি এটি তুলনামূলক হালকা ও আধুনিক ডিজাইনের হয়, যেখানে চুমকি, পুঁতি ও জরি বেশি ব্যবহৃত হয়।

নিপুন হাতে চলছে নকশা তৈরীর কাজ। ছবি: সারাবাংলা/শ্যামল নন্দী

কারিগররা জানিয়েছেন, বছরের ১২ মাসেই তাদের অর্ডার থাকে। তবে ঈদ আসলেই তাদের দম ফেলার সময় থাকে না। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ থেকেও তাদের কাছে অর্ডার আসে। একেকটি নকশা করতে তাদের গড়ে দেড় থেকে দুদিন সময় লাগে। যে নকশায় কাজ বেশি থাকে, সেটাতে সময়ও বেশি লাগে। দামও নকশার ওপর নির্ধারিত হয়। বিহারীপল্লি থেকে কাজ শেখে অনেকেই দুবাই, সৌদি আরবসহ মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে নিজেদের ভাগ্যে পরিবর্তন করেছেন বলে কারিগররা জানিয়েছেন।

এদিকে জারদৌসি ও কারচুপির কাজ মেশিনে সহজে করতে পারায় হাতে করা কাজের চাহিদা একটু কমেছে বলে জানিয়েছেন বুটিকস মালিকরা।

বিজ্ঞাপন

সকাল থেকে সন্ধ্যা কাজ করে চলছে শ্রমিকরা। ছবি: সারাবাংলা/শ্যামল নন্দী

জানা গেছে, বিহারিপল্লীতে জারদৌসী ও কারচুপির কারখানা আছে ১৫ থেকে ২০টির মতো। সেখানে কারিগর হিসেবে কাজ করছেন প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ। এছাড়া ওই এলাকার অনেক বাসা-বাড়িতে এসব কাজ করা হয়ে থাকে। কাপড়ে একেকটি কাজ করতে তারা তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। নকশা বেশি হলে টাকার পরিমাণ আরও বাড়ে।

তাদের কাছে কাজ নিয়ে বেশি আসেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। নকশা করা সেসব কাপড় চলে যায় চটগ্রামসহ দেশের বড় বড় শপিং মল ও মার্কেটে। অনেকে আবার নিজেদের পছন্দমতো নকশা তাদের কাপড়ে করে নিয়ে যান।

জাল্লাল উদ্দিন ২৫ বছর ধরে কাপড়ে জারদৌসী ও কারচুপির কাজ করছেন। ১৮ বছর আগে তিনি নিজের কারখানা খুলেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘চয়েস কারচুপি’। বর্তমানে ২২ জন কারিগর তার কারখানায় কাজ করেন।

নকশা করার জন্য চুমকি। ছবি: সারাবাংলা/শ্যামল নন্দী

জালাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৫ বছর ধরে আমি এ কাজ করছি। চাচার হাত ধরে এ পেশায় এসেছি। ১২ মাসেই আমাদের কাজ থাকে। কিন্তু ঈদে অর্ডার বেশি থাকে। এত অর্ডার পাই যে, কারিগরের অভাবে অনেক কাজ সময়মত ডেলিভারী দিতে পারি না। সাধারণ সময়ে আট থেকে ১০ঘণ্টা আমরা কাজ করি। তবে ঈদে কাজ বেশি থাকায় ২৪ ঘণ্টা আমাদের পালাবদল করে কাজ করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নরমাল একটি নকশা করতে তিন থেকে চার হাজার টাকা নেই। এসব নকশা করতে দু-তিনদিন লেগে যায়। আবার লেহেঙ্গাতে কাজ বেশি থাকে। সেটা একটু দাম বেশি পড়ে। লাখ-দেড় লাখার টাকার কাজও আছে। সেগুলো করতে মাসখানেক সময় লাগে।’

আনুশা বুটিকস ফ্যাশনের সত্ত্বাধিকারী মো. শাহিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবচেয়ে কম মজুরি নেওয়া হয় পাঞ্জাবিতে কাজ করতে। এক হাজার টাকার মধ্যেই খুব ভালো নকশা করে দেয়া যায় পাঞ্জাবিতে। তবে আমাদের বেশি কাজ থাকে থ্রি-পিছ ও বোরকাতে। তবে ঈদ আসলেই মেয়েদের সালোয়ার কামিজ ও লেহেঙ্গার কাজ বেশি থাকে। একটি লেহেঙ্গায় কাজ করাতে আমরা ২০ হাজার টাকা মতো মজুরি নিয়ে থাকি।’

মেশিনে এখন জারদৌসি ও কারচুপির যে কাজ করা হয় সেটার চেয়ে হাতে করা কাজের মান অনেক উন্নত বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘মেশিনে এসব কাজ করতে খুব কম সময় লাগে। আবার দামও কম। কিন্তু আমরা হাতে যে কাজ করি সেটা উন্নত মানের। মেশিনের কাজের কোনো গ্যারান্টি নেই।’

ব্যস্ত সময় পাড় করছে কারিগড়রা। ছবি: সারাবাংলা/শ্যামল নন্দী

সাইরান বুটিক্স ফ্যাশনের মালিক মো. আরিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যেরকম ডিজাইন এনে দেয়া হয় আমরা হুবুহু সেভাবে কাজ করে দেয়। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন আমাদের এখানে। এখন অনেক জায়গায় এসব কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানকার মতো কাজ কেউ করে দিতে পারবে না। তাই ক্রেতারা আমাদের ওপর ভরসা পায়। দাম বেশি হলেও আমাদের এখান থেকেই কাজ করান তারা।’

সারাবাংলা/আইসি/এমপি

ঈদ বাজার থ্রি-পিছ লেহেঙ্গা সালোয়ার কামিজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর