Wednesday 19 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলাবদ্ধতা নিরসন
৮ দফা কর্মপরিকল্পনা চসিকের, সময় ২ মাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ মার্চ ২০২৫ ১৮:৫৭

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সামনের বর্ষায় চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দুই মাসে বাস্তবায়নযোগ্য আট দফা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন। এতে বিভিন্ন খালে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া, খালের প্রবেশমুখ খনন, স্লুইচগেট সংস্কারসহ আরও বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্ট্রেলিয়ায় ড্রেনেজ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ড. আবদুল্লাহ আল মামুন এ কর্মপরিকল্পনাগুলো নির্ধারণ করেন।

বিজ্ঞাপন

চসিক মেয়রের জলাবদ্ধতা বিষয়ক উপদেষ্টা শাহরিয়ার খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এবং ড. মামুন গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নগরীতে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ যেখানে হচ্ছে, সেগুলোতে গিয়েছি। বিভিন্ন খাল, বড় বড় নালাগুলো দেখেছি। এরপর ড. মামুন দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে মাননীয় মেয়রের কাছে হস্তান্তর করেছেন।’

ড. আবদুল্লাহ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একেবারে প্রাথমিক কিছু কাজ, যেগুলো দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো আমি লিপিবদ্ধ করেছি। এখানে ১০টি খাল খনন করতে হবে। খনন বলতে সেখানে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনাগুলো স্কেভেটর দিয়ে টেনে সরিয়ে ফেলতে হবে, যাতে বর্ষা শুরু হলে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি না হয়। এরপর নয়টি খালের প্রবেশমুখ খনন করার কথা বলা হয়েছে। চারটি লোকেশনে সিলট্র্যাপ করতে হবে। স্লুইচগেট সংস্কার করতে হবে। এসব কাজ করতে পারলে সামনের বর্ষায় জলাবদ্ধতাটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আমরা মনে করি।’

‘এর বাইরে বড় আকারে প্রকল্পের যেসব কাজ হচ্ছে, সেগুলো চলবে। সেগুলো ভিন্ন কর্মকাণ্ড। প্রকল্পের কাজ থেকে রেজাল্ট পেতে আমার ধারণা, আরও দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। তার আগে যাতে জলাবদ্ধতাটা সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারি, সেজন্য মেয়র মহোদয়ের প্রস্তাবে আমি কর্মপরিকল্পনাটা তৈরি করেছি। এসব কাজের জন্য খুব বেশি ফান্ড লাগবে না। যতদূর জেনেছি, আমার প্রস্তাবনাগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের দফতরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে।’

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের উপস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসনবিষয়ক অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এসব কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ড. আবদুল্লাহ আল মামুন।

প্রস্তাবনায় যে ১০টি খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা দ্রুততার সাথে অপসারণের জন্য বলা হয়েছে, সেগুলো হল- চাক্তাই খাল, মহেশ খাল, ডাইভারশন খাল, বদরখালি খাল, জামালখান-সাবএরিয়া কাজীর খাল, রুমঘাটা জেলেপাড়া ছড়া, দেবপাহাড় ছড়া, চট্টেশ্বরী খাল, হিজড়া খাল এবং বাদুরতলা ছড়া। ময়লা-আবর্জনা অপসারণের মাধ্যমে এসব খালের আয়তন আরও তিন থেকে চার মিটার প্রশস্ত করার কথা বলা হয়েছে, যাতে পানিপ্রবাহ আরও সহজ হয়।

যে নয়টি খালের প্রবেশমুখ পরিষ্কারের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো- চাক্তাই খাল, কাট্টলী খাল, রাজাখালী খাল, ডাইভারশন খাল, উত্তর কাট্টলী নাজির খাল, আকমল আলী খাল, সদরঘাট খাল (মনোহর খাল), ডোমখালী খাল এবং নোয়াখাল।

পলি আটকাতে চারটি খালসংলগ্ন স্থানে ‘সিল্ট ট্র্যাপ’ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। সোগুলো হলো- জামালখান-সাবএরিয়া খাল, রামপুর খালের প্রবেশমুখ, গয়নার ছড়ার প্রবেশমুখ এবং ডিসি রোড বাদামতলী পয়েন্ট।

এ ছাড়া, বারইপাড়া ডাইভারশন চ্যানেলে সংস্কার, আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করা, খালে ভাসমান প্লাস্টিকসহ পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী ভাসমান পণ্য আটকে তুলে ফেলার বিষয় আছে কর্মপরিকল্পনায়।

এতে আরও বলা হয়েছে, উত্তর কাট্টলীর নাজিরখালে নির্মিত একটি স্লুইচগেট থেকে স্লাইডিং প্লেট চুরি হয়ে যাওয়ায় অবাধে সাগরের পানি ঢুকে পড়ছে। জরুরি ভিত্তিতে সেটি সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া, রাণী রাসমনি ঘাটে থাকা আরেকটি স্লুইচগেটও সংস্কারের জন্য বলা হয়েছে।

সেনাবাহিনী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এসব কাজ আগামী ৩০ মে’র মধ্যে সম্পন্নের কথা বলা হয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রস্তাবিত এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বিত পদক্ষেপের তাগিদ দিয়ে সভায় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জলাবদ্ধতা একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। এটি সিটি করপোরেশনের একক প্রচেষ্টায় সমাধান সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। আমরা চাই প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হোক এবং তা কার্যকর হোক। এজন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।’

সভায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে সমন্বিত ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তদারকি করতে হবে। মেয়র এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার কথা বলেন।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দরের চীফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মোহাম্মদ শামসিত তাবরীজ, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চসিক জলাবদ্ধতা নিরসন মেয়র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর