সর্বোচ্চ দামে মিনিকেট, ২ মাসে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা
১৯ মার্চ ২০২৫ ২২:৩৮ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ২২:৪০
ঢাকা: এবার রোজার শুরুতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। শুধুমাত্র অস্থির ছিল তেলের বাজার। ওই সময় সরবরাহ ঘাটতির কারণে এই অস্থিরতা দেখা দেয়। তবে বর্তমানে তেলের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা দিলেও এবার অস্থির হতে শুরু করেছে চালের বাজার। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে বিভিন্ন প্রকার চালের দাম কেজিতে ৬ থেকে ১০টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বর্তমানে খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ চলতি বছরের শুরুতে এই চাল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। মিনিকেটের পাশাপাশি বাজারে অন্যান্য চালের দামও বেড়েছে। বছর ব্যবাধানে মাঝারি মানের পাইজাম ও আটাশের দাম বেড়েছে কেজিতে ছয় টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। চালের বাড়তি দাম নিম্ন আয়ের ভোক্তাদের মাছ, মাংস ও ডিমের চাহিদায় টান দিচ্ছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। একাধিক বাজার ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম। গেল ১৮ মার্চ মিরপুরের একটি মনিহারি দোকান থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি মিনিকেট চাল কিনেছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জীবনে এর আগে কখনও এত দামে মিনিকেট চাল কিনিনি। সপ্তাহ খানেক আগেও এই চালের দাম ছিল ৮৫ টাকা কেজি। অথচ মাত্র সাতদিনের ব্যবধানেই এই চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যম আয়ের মানুষ। আয় স্থির। কিন্তু চালের দাম বেড়ে গেলে বাজারে অন্যান্য জিনিসে টান পড়ে। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্য কিনতে ১০ বার ভাবতে হয়।’
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ইব্রাহিমপুরের মনিহারি দোকানদার শামীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিনিকেট চাল এখন ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে আমি ৯০ টাকা কেজিতেই বিক্রি করছি। অনেক দোকানদারই এখন ৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। আমি আটাশ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি ও পাইজাম ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। গত এক মাসে চালের কেজিতে দাম বেড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। আর একবছরের ব্যবধানে মিনিকেটের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। গতবছরও মিনিকেট ৭৫ টাকা কেজিতে পাওয়া গেছে। প্রায় দুই মাস ধরে ৯০ টাকা কেজিতে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে।’
বুধবার (১৯ মার্চ) কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটে কথা হয় চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক বেলাল হোসেনের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাজারে মিনিকেট চালের সরবরাহ কম। ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে কেন এই চাল খেতে হবে? মানুষের উচিত অন্য চাল খাওয়া। রমজান মাসে তো এমনিতেই চালের চাহিদা নেই। তারপরেও বাজারে চালের দাম বেড়েছে। কোম্পানিগুলো নাকি মিনিকেট চালের দাম বাড়িয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক দেড় মাস পর নতুন চাল বাজারে উঠবে। বৈশাখ শুরু হলেই বাজারে নতুন চাল আসবে। তখন চালের দাম কমবে।’
কিচেন মার্কেট মূলত চালের পাইকারি বাজার। সেখানে কথা হলে মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মালিক আবুল কাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে। কয়েকদিন আগেও ৭৬ থেজে ৭৮ টাকা কেজিতে আমরা বিক্রি করেছি। এখন ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে ২৫ কেজির বস্তা ছিল ২ হাজার টাকা। এখন ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি ছিল। তবে এই চালের দাম তেমন বাড়েনি। বস্তায় বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা। কেজিতে এক টাকার মতো।’
একই বাজারের চাল বিক্রেতা মহসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৫ কেজির মিনিকেটের বস্তা আগে ১ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি করেছি, এখন দুই হাজার টাকার ওপরে বিক্রি করতে হচ্ছে। খুচরায় মিনিকেটের কেজি ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছি। আর আটাশ কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা, বস্তায় ২০০ টাকা। ৫০ কেজির বস্তা আগে ছিল ২ হাজার ৯০০ টাকা, এখন বিক্রি করছি ৩ হাজার টাকায়।’
একই বাজারের হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের কর্মচারী মঈন উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোজার মাসে কখনো চালের দাম বাড়ে না। এবার বেড়েছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেই। মিলারদের ধরা উচিত। তারা বলে মিনিকেট নেই।’ তিনি বলেন, ‘এক গাড়িতে ২৭০ বস্তা চাল আসে। এখন মিনিকেটের মাত্র ৫০ বস্তা চাল দেয়। ট্রাক ভরতে হয় অন্য চাল দিয়ে। ফলে বাজারে মিনিকেট চালের সংকট রয়েছে।’
সারাবাংলার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বছরের শুরুতে খুচরায় সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজিতে মিনিকেট বিক্রি হতে দেখা যায় দোকানগুলোতে। এ ছাড়া, বেশিরভাগ বাজারে তখন ৮০ থেকে শুরু করে ৮৫ টাকা কেজিতে মিনিকেট বিক্রি হতে দেখা গিয়েছিল। যা বছরের প্রথম শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত ছিল রেকর্ড দাম। প্রায় দুই মাস পর বুধবার (১৯ মার্চ) বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে।
তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, এসিআই’র পিউর মিনিকেটের ৫ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা কেজিতে, সে হিসাবে প্রতি কেজি মিনিকেটের দাম ৯৬ টাকা। আর আড়ং এর ন্যাচারাল মিনিকেট চালের ৫ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৭৩ টাকা, সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম প্রায় ৯৫ টাকা। অন্যান্য ব্র্যান্ডের চালও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বছর ব্যবধানে সরু চালের মধ্যে নাজির ও মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা। মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ও আটাশের দাম বেড়েছে কেজিতে ছয় টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা।
টিসিবির বুধবারের (১৯ মার্চ) তথ্যমতে, সরু চালের মধ্যে নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগেও একই দামে এ জাতীয় চাল বিক্রি হয়েছে। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৮৪ টাকা কেজিতে। সে হিসাবে মাস ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে দশমিক ৬৪ শতাংশ। এদিকে একবছর অগে এ জাতীয় চাল বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে। একবছর ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা।
মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ও আটাশ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগেও একই দামে বিক্রি হয়েছে। আর এক মাস আগে এ জাতীয় চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা কেজিতে। মাস ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে মাত্র দশমিক ৮২ শতাংশ। আর এক বছর আগে এ জাতীয় চালের দাম ছিল ৫২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। সে হিসাবে বছর ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে কেজিতে এক থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ, এমনকি এক মাস আগেও একই দামে বিক্রি হয়েছে এ জাতীয় চাল। ফলে এই চালের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তবে একবছর আগে এ জাতীয় চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে। ফলে বছর ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম