ঢাকা: ২০ মার্চ ১৯৭১। এদিন ঢাকায় ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকশ’ নেতা-কর্মী ডামি রাইফেল নিয়ে কুচকাওয়াজে অংশ নেন। তারা সামরিক কায়দায় বন্দুক উঁচিয়ে রাজপথে মিছিল করেন। বিক্ষুব্ধ জনতা স্বতঃস্ফুর্তভাবে স্বাগত জানায় তাদের।
শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমেদ গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠক করতে যান। বৈঠকে জয়দেবপুরে নিরীহ বাঙালির ওপর সৈন্যদের নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানান তারা। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘটনা তদন্তের আশ্বাস দেন।
আলোচনা শেষে শেখ মুজিবর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কাল আবার বৈঠক হবে।’ তিনি এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, ‘সময় এলে অবশ্যই আমি সবকিছু বলব।’
এর পর রাতে এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব বলেন, ‘স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে বাংলার মানুষ প্রস্তুত রয়েছে। মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে একটি অনুপ্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত।’ তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে, গাজীপুর ও জয়দেবপুরের সশস্ত্র আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে শহর, পাড়া, মহল্লায়। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমবেত হয় ছাত্র-জনতা। দিনব্যাপী চলে সভা-সমাবেশ। শহিদ মিনারে সাবেক নৌ-সেনাদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে তারা শেখ মুজিব ঘোষিত মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করার জন্য একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, তিনি লন্ডন পরিকল্পনা, যা ১৯৬৯ সালে লন্ডনে বসে শেখ মুজিব, খান আবদুল ওয়ালী খান ও মিয়া মমতাজ মোহম্মদ খান দৌলতানা কর্তৃক প্রণীত, তা মানবেন না। তিনি বলেন, ‘ওই পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ প্রধান ঘোষিত ৬ দফার ভিত্তিতেই করা হয়েছে।’
এ ছাড়া, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মওলানা মফতি মাহমুদ পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন। সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এ.কে. ব্রোহি সকালে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন।
এদিকে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হামিদ খান ও জেনারেল টিক্কা খানের বৈঠকে চূড়ান্ত হতে থাকে অপারেশন সার্চ লাইটের নীল নকশা।