ঈদে আকাশপথেও যাত্রীচাপ বেশি
২০ মার্চ ২০২৫ ১৪:১২ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ১৬:১৫
ঢাকা: ঈদে সড়ক পথে ভোগান্তি এড়াতে দূরের যাত্রীরা বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও কক্সবাজারের অনেকেই বিমানে যাতায়াত করে থাকেন। ফলে স্বল্প সংখ্যক ফ্লাইটের বিপরীতে যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় আকাশপথের টিকিটের ওপর ব্যাপক চাপ লক্ষ্য করা যায়। এতে অনেক বেশি দামে টিকিটও কাটতে হয় যাত্রীদের।
দেশের আকাশপথে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনায় খুব বেশি কোম্পানি না থাকলেও ভরসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভো এয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও এয়ার এস্ট্রা ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
এবারের ঈদেও এসব এয়ারলাইন্সের টিকিটে বাড়তি চাপের কথা শোনা যাচ্ছে। টিকিটের দামও দ্বিগুনেরও বেশি বলে জানিয়েছে আকাশপথের অনেক যাত্রী।
ঈদের ছুটি সামনে রেখে টিকিট চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহী। ঈদের পর কক্সবাজারের টিকিটের চাপ বেশি। বাড়তি চাপ সামাল দিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৩টি অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট আগে থেকেই বেশি ছিল। এবারের ঈদে এয়ারলাইন্সগুলো দিনে প্রায় সাত হাজার যাত্রী বহন করবে বলে জানা গেছে।
ঈদে যাত্রীদের চাহিদার ভিত্তিতে ওই ১৩টি বিশেষ ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। বিমানের যে কোনো সেলস সেন্টার, বিমান ওয়েবসাইট, বিমান কল সেন্টার ১৩৬৩৬ ও বিমান অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি থেকে এসব রুটের টিকিট কিনতে পারছেন যাত্রীরা।
আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে নীলফামারীর সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহীর টিকিটের চাহিদা বেশি। চট্টগ্রাম ও সিলেটেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় টিকিটের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। যাত্রী চাহিদা কম থাকায় ঈদের আগে ফ্লাইট কমছে কক্সবাজারে। তবে ঈদের পর টানা এক সপ্তাহ কক্সবাজারে টিকিটের চাহিদা কয়েক গুণ বেশি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম জানিয়েছেন, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত রয়েছে ২১টি উড়োজাহাজ। যেগুলো দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটের চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, বরিশাল ও রাজশাহী গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। এর বাইরে আন্তর্জাতিক রুটের লন্ডন, রোম, টরন্টো, রিয়াদ, জেদ্দা, মদিনা, দাম্মাম, দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, কুয়েত, দোহা, মাস্কাট, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, ক্যান্টন (গুয়াংজু), কলকাতা, দিল্লি ও কাঠমান্ডুতে যাত্রী পরিবহন করছে।
১৭ মার্চ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে অভ্যন্তরীণ রুটে ১৩টি বিশেষ ফ্লাইট বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আগামী ২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে ২৫ থেকে ৩০ মার্চ ছয়টি, ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে ২৬ থেকে ৩১ মার্চ ছয়টি এবং ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা রুটে ২৭ মার্চ একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান।
ইউএস-বাংলা
দেশের বৃহত্তম বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুটি উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। এখন এয়ারলাইন্সটির বহরে ২৪টি উড়োজাহাজ। সাতটি অভ্যন্তরীণ ও নয়টি দেশের ১১টি আন্তর্জাতিক রুটে সুনামের সঙ্গে যাত্রী পরিবহন করছে ইউএস-বাংলা।
আসন্ন ঈদুল ফিতরে নীলফামারীর সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহীর টিকিটের চাহিদা বেশি। আর ঈদের পর টানা এক সপ্তাহ কক্সবাজারে টিকিটের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ইউএস-বাংলা।
জানতে চাইলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রমজানের আগ থেকেই সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহীর টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ঈদের সপ্তাহখানেক আগেই সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহীগামী সব ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
ইউএস-বাংলা ৯টি দেশের ১১টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। ঈদের ছুটিতে এসব রুটে পর্যটকদের টিকিট চাহিদা কেমন, জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের মতোই আন্তর্জাতিক গন্তব্যে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারতে পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় থাইল্যান্ড এবং মালদ্বীপে পর্যটক বেশি ভ্রমণ করছেন। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এ চাপ দেখা যাচ্ছে।’
নভোএয়ার
দেশের বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা নভোএয়ার ২০১৩ সাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। গত ১১ বছরে ধারাবাহিকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে নভোএয়ার। এবার ঈদে নভোএয়ারেরও সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহীর টিকিটের চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মেজবাউল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই ঈদে আকাশপথে ঘরমুখো যাত্রী চাহিদা বাড়ছে। সে অনুযায়ী কয়েক মাস আগ থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। এরই মধ্যে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আশাকরি ঈদের ৭ দিন আগেই সব টিকিট বিক্রি শেষ হবে।’
এয়ার এস্ট্রা
২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর দুটি এয়ারক্র্যাফট দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে এয়ার অ্যাস্ট্রা। এখন কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং সৈয়দপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি গন্তব্যেই যাত্রী চাপ রয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি এই বিমান সংস্থাটি।
সারাবাংলা/ইউজে/এমপি