Tuesday 10 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অনভ্যস্ততায়’ বেড়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনা


২৪ জুন ২০১৮ ০৮:৪১

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: গত ১৯ জুন রমনায় রিকশা ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে ফারুক হোসেন নামের মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন, গুরুতর আহত হন রিকশাচালক। ভোর পাঁচটার ওই দুর্ঘটনায় ফারুক হোসেনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ঈদের দিন আওয়ামী সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের দারোয়ান আলম মিয়া অফিস শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। ধানমন্ডি ২৭ এর কাছাকাছি আসতে আলম মিয়ার রিকসাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি মাইক্রোবাস, ভেঙে যায় ডান পা। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকাতে সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশই হয়েছে মোটরবাইক দুর্ঘটনা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘ফাঁকা ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করা দরকার, সেটাও থাকে না। আবার যারা সড়ক ব্যবহার করছেন তারাও এ ফাঁকা শহরের সঙ্গে অভ্যস্ত নন। তাই এসময় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।’

ছুটির সময়ে কেন এতো দুর্ঘটনা ঘটে জানতে চাইলে ‘সেফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্স’ এর সমন্বয়ক সদরুল হাসান মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এর জন্য আমাদের অনভ্যস্ততা দায়ী। স্বাভাবিকভাবে জ্যামের এ শহরে আমরা আটকে থাকি, তাই যখন ফাঁকা রাস্তা পাই, তখন সে রাস্তায় আমাদের আচরণ কেমন হবে সে সর্ম্পকে আমরা অবহিত নই। এ কারণেই আমরা বেপরোয়া হয়ে যাই। একইসঙ্গে, এসময় ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাটাও এর জন্য দায়ী। আমরা ধরেই নেই, এ সময়ে ট্রাফিক সিস্টেম লুজ (শিথিল) থাকবে, আমাদের মনোজগতটাও এ সময় সেভাবেই তৈরি হয়ে যায়।’

‘ফাঁকা ঢাকার অবস্থার কেমন হবে সে সর্ম্পকে ট্রাফিক সিস্টেম কেমন হওয়া উচিত সে নিয়ে কাজ করা হয় না। রাস্তার নিরাপত্তা নিয়ে যারা এর ব্যবস্থাপনায় তারা এবং আমরা যারা সড়ক ব্যবহার করি তারা কেউ অভ্যস্ত না’, বলেন সদরুল হাসান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই ধারণা হয়, পরিবহনের সংখ্যা যেহেতু কম, তাই হয়তো কম ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করলেও চলবে। ফাঁকা ঢাকা নিয়ে অনভ্যস্ততা সড়ক ব্যবহারকারী এবং ট্রাফিক সিস্টেম ব্যবস্থাপনাকারী, এ দুই পক্ষ থেকেই।’

একইসঙ্গে, একটি পুরনো গাড়ি যদি ৯০ মাইলে স্পিডে চালালে রাস্তার মাঝে গিয়ে যেখানে থামার কথা, সেখানে ঠিকমতো থামতে পারবো কিনা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গাড়ির ব্রেক রয়েছে কিনা, গাড়ির যে যান্ত্রিক সক্ষমতা রয়েছে কিনা সে বিষয়েও চালকরা ‘ডেমকেয়ার’, বলেন সদরুল হাসান মজুমদার।

ছুটির সময়ে সব ধরনের গাড়ি চালকদের মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে মন্তব্য করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘তরুণরা এসময় অ্যাডভেঞ্চারে মাতে, বিভিন্ন রাস্তায় রেস করে। তাদের মনোজগতে নানা ধরনের উদ্দীপনা কাজ করে, তাদের নিজেদের ওপর, পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং এ কারণেই মোটরবাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেশি।’

আর ঢাকার বাইরে থেকে যেসব গণপরিবহন আসে তাদের ঢাকায় ফেরার তাড়া থাকে, ঢাকায় ফিরে আবার ট্রিপ নেওয়ার তাড়া থাকে। স্বাভাবিকভাবেই গাড়ির গতি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। একইসঙ্গে এসব গণপরিবহনের চালকরা যে একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, সে বোধ এবং শিক্ষা-কোনটাই তাদের নেই। নেই ন্যূনতম ভয়ভীতি কিংবা সচেতনতাবোধ। একইসঙ্গে তারা আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল নয়, যার কারণে তাদের এই ‘রেকলেস ড্রাইভিং’, বলেন ডা. তাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও পঙ্গুত্বের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ১৫০ জনের বেশি মানুষ। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক হাজার ৭৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে একহাজার ৮৪১ জন, আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৪৭৭ জন এবং এর মধ্যে পঙ্গু হয়েছেন ২৮৮ জন। তবে ঈদের আগে পরে ঢাকার ভেতরে এবং ঢাকার বাইরে এ দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

গত ১৮ জুন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে জানা যায়, ঈদের তৃতীয় দিনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮১ জন, এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন। ১৭ জুন এসেছিলেন ১৮৬ জন, ভর্তি হয়েছেন ৭১ জন, ১৬ জুন এসেছিলেন ১৭৩ জন, ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন এবং গত ১৫ জুন এসেছিলেন ১৩৮ জন, যার মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৫৮ জন। জরুরি বিভাগ ছাড়াও বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় একই সংখ্যক রোগী।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি বিশ্বাস সারাবাংলাকে জানান, প্রতিবছর ঈদের সময় অপ্রত্যাশিত হারে দুর্ঘটনায় আহত রোগী আসতে থাকে। বিউটি বিশ্বাসের ভাষায়, ‘অনেক রোগী, প্রচুর রোগী।’

বিউটি বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শতকরা ৮০ ভাগই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী, এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। বাকি ২০ শতাংশও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত।’

ঈদের ছুটির ঠিক এক সপ্তাহ পর গতকাল শনিবার (২৩ জুন) ঢাকাসহ দেশের আট জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলায় বাস উল্টে ১৮ জন, রংপুর সদরে বিআরটিসির বাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছয়জন এবং লক্ষ্মীপুর, নাটোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জে দুইজন এবং রাজবাড়ীতে এক জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকাগামী যাত্রী ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা।

সারাবাংলা/জেএ/এমও


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর