Monday 24 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ খুলনাবাসীর মশারি মিছিল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ মার্চ ২০২৫ ২১:৩৮ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ২২:৫০

খুলনায় মশারি মিছিল

খুলনা: খুলনা মহানগরী জুড়ে বেড়েছে মশার উৎপাত। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে খুলনাবাসী। দিনের আলোতেও মশারি টানিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে থাকতে হচ্ছে মানুষকে।

শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে মহানগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে ধূপ ও কয়েল জ্বালিয়ে এবং মশারি নিয়ে বিক্ষোভ করেছে খুলনা নাগরিক সমাজ। মশার উপদ্রব বৃদ্ধির জন্য খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে (কেসিসি) তারা দায়ী করছেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নগরবাসী। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে না পারলে মশাবাহিত রোগের কারণে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

নগরবাসীর অভিযাগ, শহর জুড়ে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই বাসা-বাড়িতে মশা কামড়াতে থাকে। সারাদিন বাসায় কয়েল জ্বালানো বা মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। গত ১ মার্চ খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে মশারি মিছিল অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ওই দিন রাতে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করে কেসিসি। এরপর আর তাদের দেখা মেলেনি।

খুলনা মহানগরীর নিরালা এলাকার বাসিন্দা কামরুল শেখ বলেন, মশার অসহনীয় যন্ত্রণায় রয়েছি। বিকেলে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। মনে হচ্ছে আমরা কোনো মশার শহরে বসবাস করছি। কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা মশানাশক স্প্রে করেও এ যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছি না।

নগরীর দোলখোলা এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন মল্লিক বলেন, মশার যন্ত্রণায় আমরা নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। বাচ্চারা ঘরের ভেতরে পড়াশোনা করতে পারছে না। সারাদিন ঘরের ভিতর কয়েল জ্বালিয়ে অথবা মশারী টানিয়ে রাখতে হচ্ছে। আমাদের এলাকায় শেষ কবে মশকনিধন দেখেছি মনে করতে পারছি না।

বিজ্ঞাপন

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, নগরীতে ব্যাপক হারে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়াসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মশা নিধনে কেসিসি সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

এদিকে, শনিবারম (২২ মার্চ) দুপুরে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি’র) প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার বলেন, নগরীতে মশার উপদ্রপ কমানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। মশা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয় তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মশা নিয়ন্ত্রণে কেসিসি বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিনিয়ত মশা বংশ বিস্তার করে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আগামী ২৪ মার্চ থেকে প্রতিদিন ১০টি করে ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হবে। একই সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকে সচেতন করতে মাইকিং করা হবে।

তিনি বলেন, ‘তবে মনে রাখা দরকার মশা নিয়ন্ত্রণ কেবল কেসিসির একার পক্ষে সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এসকল কাজ বাস্তবায়ন করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হবে। দরকার হলে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাজ নেই মজুরি নেই ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নগরবাসীকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এই সভার মতামত নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাবো। নিজের বাড়ির আঙ্গিনা নিজেরাই পরিষ্কার রাখলে মশা থেকে অনেকাংশে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। যেখানেই জলাবদ্ধতা সেখানেই মশার বংশ বিস্তারের সুযোগ থাকে। তাই অপ্রয়োজনে যে কোন পাত্রে জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সভায় সঠিক সময়ে মশার ওষুধ ছিটানো, ড্রেন পরিষ্কার রাখা, নগরবাসীকে সচেতন করা, নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা বিষয়ে অংশগ্রহণকারীরা মতামত তুলে ধরেন। এছাড়াও দখল হয়ে যাওয়া ২২টি খাল উদ্ধার, ময়ুর নদ সংস্কার, দ্রুত সময়ের মধ্যে নগরীতে চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ করা, মশা নিয়ন্ত্রণে সকল ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের তদারকি বাড়ানো, প্রয়োজনে জনবল নিয়োগ, মশা নিয়ন্ত্রণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা-সহ বিভিন্ন মতামত সভায় উঠে আসে।

মতবিনিময় সভায় কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম, কেডিএ’র সদস্য (অর্থ ও প্রশাসন) এমএম মাহমুদুর রহমান, কেসিসি’র সচিব শরীফ আসিফ রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কোহিনুর জাহান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোঃ নিজামুল ইসলাম, কেসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মশিউজ্জামান খান ও ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সভায় কেসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ, নাগরিক ফোরামের প্রতিনিধি-সহ এনজিও এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, খুলনা মহানগরীতে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। ৩১টি ওয়ার্ড জুড়ে প্রায় এক হাজার ২০৬ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে।

সারাবাংলা/এসআর

খুলনা মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মশারি মিছিল সারাবাংলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর