Monday 24 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২৩ মার্চ ১৯৭১
পাকিস্তান দিবস হয়ে উঠল প্রতিরোধ দিবস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ০৮:২১

২৩ মার্চ ১৯৭১, পাকিস্তান দিবস হয়ে উঠল প্রতিরোধ দিবস। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর প্রতিবছর ২৩ মার্চ পালিত হতো পাকিস্তান দিবস। এদিন ভোরে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো। এ ছাড়াও থাকত কুচকাওয়াজ, সভা-সমাবেশ ও নানা অনুষ্ঠান। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস পালিত হয়নি বাংলাদেশে। এদিন পালিত হয় প্রতিরোধ দিবস।

১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। তার আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ওই বছরের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস হিসেবে নয়, পালিত হবে প্রতিরোধ দিবস হিসেবে। প্রতিরোধ দিবসে ভোর ৬টায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার প্রভাতফেরি বের হয়। প্রভাতফেরিটি আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে ভাষা শহিদদের কবর, শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হকসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহিদদের কবর জিয়ারত করে। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাও নিবেদন করেন।

বিজ্ঞাপন

ভোরে রাজধানীর সচিবালয়, হাইকোর্ট, সব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি কালো পতাকাও উত্তোলন করা হয়। একমাত্র প্রেসিডেন্ট ভবন, গভর্নর হাউস, ক্যান্টনমেন্ট ও তেজগাঁও বিমানবন্দরেই কড়া নিরাপত্তার মাঝে এদিন পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকাল ৯টায় আউটার স্টেডিয়ামে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ‘জয় বাংলা বাহিনী’র আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ এবং যুদ্ধের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ঢাকা পরিণত হয় পতাকার নগরীতে।

বিজ্ঞাপন

ভোর থেকেই ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনতার একের পর এক মিছিল নিয়ে শেখ মুজিবের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে জড়ো হতে থাকে। মিছিলে শামিল হওয়া সর্বস্তরের জনতার হাতে হাতে ছিল বাঁশ, লাঠিসহ নানা দেশীয় অস্ত্র। জনতার কণ্ঠে ছিল সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান এবং জয় বাংলা স্লোগান।

সকালে ধানমন্ডির বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন শেখ মুজিব। একইসঙ্গে ওড়ানো হয় কালো পতাকাও। এ সময় সমবেত কণ্ঠে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি পরিবেশিত হয়। পতাকা উত্তোলন শেষে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা সামরিক কায়দায় পতাকার প্রতি সালাম জানায়। পরে শেখ উপস্থিত সর্বস্তরের জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলার দাবির প্রশ্নে কোনো আপস নাই। বহু রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজনবোধে আরও রক্ত দেব, কিন্তু মুক্তির লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাবই। বাংলার মানুষকে আর পরাধীন করে রাখা যাবে না। আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয়, সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকার লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম আমাদের চলবে। এই সংগ্রামের পন্থা কী হবে তা আমিই ঠিক করে দেব, সে ভার আমার উপরই ছেড়ে দিন।

তিনি আরও বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। যতদিন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির সার্বিক মুক্তি অর্জিত না হবে, যতদিন একজন বাঙালি বেঁচে থাকবে, এই সংগ্রাম আমাদের চলবে। মনে রাখবেন, সর্বাপেক্ষা কম রক্তপাতের মাধ্যমে যিনি চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন, তিনিই সেরা সিপাহশালার। তাই বাংলার জনগণের প্রতি আমার নির্দেশ, সংগ্রাম চালিয়ে যান, শৃঙ্খলা বজায় রাখুন, সংগ্রামের কর্মপন্থা নির্ধারণের ভার আমার উপরই ছেড়ে দিন।’

২৩ মার্চ ঢাকা টেলিভিশনে পাকিস্তান দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান থাকলেও ঢাকা টেলিভিশনের বাঙালি কর্মীরা পাকিস্তান দিবসের কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করতে দেননি। পাকিস্তানের জাতীয় সংগীতের বদলে এদিন প্রচারিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা। পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার বদলে পর্দায় ভেসে উঠেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

আগেই পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল, যদি পাকিস্তানের পতাকা টেলিভিশনে প্রদর্শন না করা হয় তবে বাঙালি কর্মীদের টেলিভিশন কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে। কিন্তু পিছু হটেননি ঢাকা টেলিভিশনের বাঙালি কর্মীরা। টেলিভিশনে এদিন সম্প্রচারিত হয় কবিতার অনুষ্ঠান। সম্প্রচারিত হয়েছিল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে রচিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাটক ‘আবার আসিব ফিরে’।

তথ্যসূত্র: [দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩ ও ২৪ মার্চ ১৯৭১/দৈনিক পূর্বদেশ ২৩ ও ২৪ মার্চ ১৯৭১/দৈনিক যুগান্তর ২৪ মার্চ ১৯৭১]

সারাবাংলা/পিটিএম

২৩ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তান দিবস প্রতিরোধ দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর