ঠাকুরগাঁওয়ে মিলনকে হত্যার পর মুক্তিপণ আদায় ছিল পূর্বপরিকল্পিত
২৩ মার্চ ২০২৫ ২২:৫৫ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ২৩:৫১
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে। চক্রটি ইতোপূর্বে আরও বেশ-কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
রোববার (২৩ মার্চ) সন্ধায় ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন অর রশীদ এ তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন— ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মহেশপুর বিটবাজার এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সেজান আলী (২৩), আরাজি পাইক পাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ (২৫)। ফেসবুকে প্রেমের
ফাঁদে সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন সালন্দর ইউনিয়নের শাহীনগর তেলিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে ও মুরাদের ভাগ্নি রত্না আক্তার রিভা (১৯)। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় সহায়তা করার অপরাধে গ্রেফতার হন আকচা এলাকার ইলিয়াসের ছেলে মনিরুল (১৭)। আলামত গুম করতে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছেন সেজান আলীর মা শিউলি বেগম।
ডিবি পুলিশের কাছে জানা গেছে, মিলনকে অপহরণের পর হত্যা ও মরদেহ গুম করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। অপহরণের পর পরই মিলনকে হত্যা করে ঘাতক চক্রটি। অপহরণের প্রায় ৬ মাস আগে থেকে মিলন ও তার পরিবারকে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছিলেন হত্যাকারী সেজান। ঘটনার আগে হত্যার জন্যে কসটেপ ও মাফলার কিনে রেখেছিল তারা। মরদেহ নিয়ে যাওয়ার রাস্তা ও বিকল্প রাস্তাসহ গুম করার পরিকল্পনা তাদের সাজানোই ছিল। রিমান্ডে নেওয়ার পরেই এমন তথ্য উঠে আসে।
পুলিশ জানায়, মিলনকে মাফলারের সাহায্যে ২-৩ মিনিটেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সেজান ও মুরাদ। শুধু তাই নয়, হত্যার পরে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরেছে তারা। তবে এ ঘটনায় প্রথমে মুক্তিপণ ৩ লাখের টার্গেট থাকলেও পরে ৩০ লাখ নেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। একটা পর্যায়ে গিয়ে ২৫ লাখের বিনিময়ে সম্মত হয়।
পুলিশ আরও জানায়, সাধারণত কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাই সেজানের অপহরণকারী চক্রের মূল টার্গেট থাকত। উঠতি বয়সী ছেলেদের ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডেকে নিয়ে প্রথমে বলাৎকার ও অপহরণ করে মুক্তি পণের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিতো। একটা সময় তারা এ ফাঁদের চক্রে নারীদের দিয়ে উঠতি বয়সি যুবকদের আকৃষ্ট করতে থাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে এই অপরাধ জগতে প্রবেশ করতে থাকে তারা। শুরুর দিকে প্রতিটি অপহরণের ঘটনায় এক-দুই হাজার টাকা নিলেও, আস্তে আস্তে তারা লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করতে শুরু করে।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা আরও জানায়, মিলনকে অপহরণের ঘটনায় পাওয়া মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাই সেজানের অপরাধ জীবনের সবচাইতে বড় দাগ ছিল। এর আগে ছোটো বড় প্রায় ১০-১২টি অপহরণ ও
ধর্ষণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল সেজান। এ সকল ঘটনায় সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মুক্তিপণ হাতিয়েছে সেজান চক্রটি।
ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন অর রশীদ জানান, চক্রটির বিরুদ্ধে আরও দুটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। একটি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বামন পাড়া গ্রামের জয়ন্ত বর্মনের ছেলে
শান্ত বর্মন এবং অপরজন হলেন দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার পাকেরহাট কলেজপাড়া গ্রামের মহসীন আলীর ছেলে সাকিব আহম্মেদ।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মিলন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/এইচআই