Tuesday 01 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দত্তকের নামে ‘শিশু রফতানির’ অভিযোগ স্বীকার করল দ. কোরিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৭ মার্চ ২০২৫ ১৩:৫৪ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫ ১৪:৪০

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়া কয়েক দশক ধরে বিতর্কিত এক কর্মসূচির মাধ্যমে অন্তত ১ লাখ ৭০ হাজার শিশু ও নবজাতককে বিদেশে দত্তক দেওয়ার নামে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, এক তদন্তে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

সরকারের পর্যবেক্ষণের অভাবের কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলো লাভের আশায় শিশু রফতানি করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তে প্রতারণা, নথি জালিয়াতি ও জোরপূর্বক দত্তকের ঘটনাও পাওয়া গেছে।

১৯৫০-এর দশক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি সংখ্যক শিশু বিদেশে দত্তক পাঠিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই গেছে পশ্চিমা দেশগুলোতে।

দক্ষিণ কোরিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দত্তক প্রক্রিয়ায় কঠোরতা এনেছে, তবে অনেক দত্তকপ্রাপ্ত শিশু এবং তাদের জন্মদাতা অভিভাবকরা এখনও অতীতের কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা ভুলতে পারেননি।

সত্য ও পুনর্মিলন কমিশনের চেয়ারপার্সন পার্ক সুন-ইয়ং বলেছেন, ‘এটি আমাদের ইতিহাসের লজ্জাজনক অধ্যায়। অনেক দত্তকপ্রাপ্ত শিশু ভালোবাসার পরিবারে বড় হলেও, অনেকেই ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার কারণে দুর্ভোগ ও মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছে। এমনকি আজও, তারা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।’

বুধবার (২৬ মার্চ) প্রকাশিত স্বাধীন সত্য ও পুনর্মিলন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে বিদেশে পাঠানো ৩৬৭ জন দত্তক হওয়া ব্যক্তি প্রতারণার অভিযোগ এনে আবেদন জমা দিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত ১০০টি অভিযোগ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে ৫৬ জন দত্তকপ্রাপ্ত ব্যক্তি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। তদন্ত এখনও চলমান এবং এটি মে মাসে শেষ হবে।

বিজ্ঞাপন

কোরিয়ান যুদ্ধের পর, দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ ছিল, যেখানে স্থানীয় পরিবারগুলো শিশু দত্তক নিতে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। ফলে সরকার বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় দত্তক গ্রহণ কর্মসূচি শুরু করে।

কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সরকারি তদারকির অভাবে বেসরকারি সংস্থাগুলো দত্তক নীতির অপব্যবহার করেছে।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশি সংস্থাগুলো প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিশু চেয়েছিল, আর কোরিয়ান সংস্থাগুলো প্রক্রিয়াগত নজরদারি ছাড়াই ব্যাপক হারে শিশুদের দত্তক দেওয়া চালিয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জন্মদাত্রী মায়ের সম্মতি ছাড়াই শিশুদের দত্তক দেওয়া, দত্তক গ্রহণকারী অভিভাবকদের যথাযথ যাচাই না করা, এবং শিশুদের ভুল পরিচয়ে নথিভুক্ত করা—এসব অনিয়ম নিয়মিত ঘটতো।

ফলস্বরূপ, বহু দত্তকপ্রাপ্ত ব্যক্তি এখন তাদের জন্মপরিবার সম্পর্কে তথ্য পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন, কারণ তাদের কাগজপত্রে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছিল।

কমিশন সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার এবং আন্তঃদেশীয় দত্তকের জন্য আন্তর্জাতিক মান মেনে চলার সুপারিশ করেছে।

২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়া একটি নতুন আইন পাস করেছে, যার মাধ্যমে সমস্ত আন্তর্জাতিক দত্তকের নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি সংস্থার পরিবর্তে সরাসরি সরকারের হাতে যাবে। এটি জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে সরকার এখনও কমিশনের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

সারাবাংলা/এনজে

দক্ষিণ কোরিয়া দত্তক রফতানি শিশু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর