শেষ সময়ে উৎসবমুখর সিলেটের ঈদ বাজার
২৭ মার্চ ২০২৫ ২১:১৩ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫ ২২:৫৮
সিলেট: পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর তিন কিংবা চার দিন বাকি। শেষ সময়ে এসে সিলেটের বিপণিবিতানগুলোতে ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। সিলেটে ঈদ বাজার সাধারণত রমজানের মাঝামাঝি থেকে জমে উঠে। প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় রমজানের শেষ দিকে রেমিট্যান্স আসার পরই কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সিলেটের মানুষ।
অভিজাত ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও জমে উঠে মুসলিম ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসবের ঈদ বাজার। যানজট আর কেনাকাটার ভিড়ে তিল ধারনের ঠাঁই নেই শপিংমলগুলোতে। বেশিরভাগ তরুণদের পছন্দ ফিটিং কাপড়, তাই ব্যস্ততা বেড়েছে দর্জি বাড়িতেও। এ ব্যস্ততা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত।
এদিকে ক্রেতাদের স্বাগত জানিয়ে বিপণিবিতানে নির্মিত করা হয়েছে নজড়কাড়া তোড়ন। প্রধান সড়কও রঙিন আলোক সজ্জায় সজ্জিত। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর এমন আয়োজনে খুশি ঈদে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতারা। ফলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে চারিদিকে। রাতের শেষ সময় পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জিন্দাবাজার এলাকার ওয়েষ্ট ওয়াল্ড শপিং সিটি, মিলেনিয়াম মার্কেট, কাকলি শপিং সেন্টার, সিটি সেন্টার, ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, কাজী ম্যানশন, আল-হামরা শপিং সিটি, লতিফ সেন্টার, কানিজ প্লাজা, শুকরিয়া মার্কেট, সিলেট প্লাজা, আহমদ ম্যানশন, মিতালী ম্যানশন এবং বন্দরবাজার এলাকার মধ্যবিত্তের অন্যতম পছন্দ হাসান মার্কেট ও মধুবন সুপার মার্কেটে ক্রেতাদের ঢল নামে।
একইভাবে কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে উঠেছে, আধুনিক ফ্যাশন হাউসপাড়া খ্যাত নয়াসড়ক ও কুমারপাড়া। বিশেষ করে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের ঈদ অফার দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে দেশি-বিদেশি ঈদের স্পেশাল পোশাক।
জনপ্রিয় এসব ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের নিজস্ব আদিপত্য ধরে রেখেছে দীর্ঘদিন। তাদের মধ্যে আড়ং, মাহা, লা-রিভ, সেইলর, শী, ইজি, স্মারটেক্স, রিচম্যান লুবনান, দর্জিবাড়ি, ইস্টাসি, বেল, চন্দ্রবিন্দু, কমলা ভান্ডার, ইয়েলো, আমব্রেলা, মিরর, বারনী, রাজস্থান, ম্যাকেঞ্জি, ভনডাচ, গোল্ডেন হেন্ড, সিগনালসহ দেশি-বিদেশি ও লোকাল ব্যান্ড।
এ ছাড়াও নগরীর মহাজনপট্টি এলাকার পোশাকের পাইকারি বাজারও ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর। তবে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত ক্রেতারা পড়েছেন চাপে।
নগরের বিভিন্ন দোকানিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এবারের ঈদে তরুণীদের পছন্দ পাকিস্তানি থ্রিপিস গারারা, শারারা, লেহেঙ্গা, গোল কায়রা বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। নারীদের জামদানি, কাতান, কাশ্মীরি কাজ করা শাড়ি, থ্রিপিস, ওয়ান পিস ও পুরুষদের পাঞ্জাবি-পায়জামা, কুর্তা, টি-শার্ট, জিন্সপ্যান্ট এবং শিশুদের জন্য নানা রঙের আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। গরমকে প্রাধান্য দিয়ে ক্রেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং গহনার দোকানগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে আগের মতো ভারতীয় পোশাকের প্রভাব নেই বলে জানান বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
জিন্দাবাজারের ওয়েষ্ট ওয়াল্ড শপিং সিটির জেএমএম উম্মাহ ফ্যাশন এর পরিচালক ওলিউর রহমান সাদ্দাম বলেন, এবার আমার পোশাকের নতুন শো-রুম করেছি। এখন পর্যন্ত ক্রেতা সমাগম মোটামুটি ভালো। তবে গত বছরের তুলনায় এবার কম ব্যবসা হচ্ছে। আশা করছি আগামী কয়েক দিনে ক্রেতা সমাগম আরও বাড়বে।
ঈদের পোশাক কিনতে আসা রায় নগরের বাসিন্দা কানিজ ফাতেমা সারাবাংলাকে বলেন, এবারের ঈদে কাপড়ের বাড়তি দাম চাইছেন বিক্রেতারা। স্কুল-কলেজ রোজার শুরু থেকেই বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই আগেভাগে কেনাকাটা করে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। সে বিষয়টি টের পেয়ে দাম ছাড়তে চাইছেন না তারা।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বাজার তত জমে উঠছে। ইফতার শেষে দোকান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতার ভিড় বেশি থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তায় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এরপরও সবাইকে সাবধান থাকতে হবে যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি মার্কেট ও মলে সাদা পোশাকে পুলিশ রয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। পুলিশ প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে; ফলে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতারা মার্কেটগুলোয় আনাগোনা করছেন। পছন্দের পোশাক খুঁজতে এক দোকান থেকে অন্য দোকান ঘুরছেন।
সারাবাংলা/এইচআই
ঈদ বাজার ঈদের পোশাক নারীদের ঈদের পোশাক পোশাক ফুটপাতের বাজার সিলেট সিলেটের ঈদ বাজার