Monday 31 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাই আন্দোলনে শহীদ মামুনের পরিবারে এবার ঈদের আনন্দ নেই

তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি
২৯ মার্চ ২০২৫ ১৯:০১ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৯:০৩

শহীদ মামুন মিয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র মামুন মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে গত ঈদেও বাড়ি ফিরেছিলেন বড় ভাই রুবেল মিয়া। কিন্তু এবার হারিয়ে গেছে তার ঈদের আনন্দ। এবারের ঈদে মামুন নেই, এই শূন্যতা যেন আকাশসমান ভার হয়ে বসে আছে পরিবারের ওপর।

দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা পরিবারটির জন্য মামুন মিয়া ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। ঈদ এলেই পরিবারের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনতেন। বাবা-মা, ভাই-বোনের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যেতেন ঈদের সময়। এবার সেই জায়গাটা ফাঁকা। মামুনই তো নেই।

বিজ্ঞাপন

শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের চরচিকন্দি গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুল গনি মাদবর ও গৃহিণী মা হেনা বেগমের ছোট সন্তান ছিলেন মামুন। সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল ভালো আয় করে পরিবারের অভাব দূর করবেন। বিদেশে চাকরির জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান মামুন।

মামুনের ভাই রুবেল ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেন, ‘গত ঈদেও ঢাকা থেকে একসঙ্গে বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার ভাবতেই পারছি না, মামুন নেই। মনে হয় মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। এবার ঈদের আনন্দ আমাদের ছুঁতেই পারছে না। বাবা অসুস্থ, কাজ করতে পারেন না। সংসারের দায়িত্ব এখন আমার ওপর। প্রতিবার মামুন সবাইকে নতুন কাপড় কিনে দিত, এবার ঈদ আছে কিন্তু আনন্দ নেই।’

সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রশাসন মামুনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন মামুনের পরিবারকে। কেউ কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এসবে কী মায়ের চোখের জল থামাতে পারে!

বিজ্ঞাপন

হয়তো ঈদের দিন সকালে হেনা বেগম ছেলের আলমারিটা খুলে বসবেন! দেখবেন ভেতরে সাজানো জামাগুলোয় কেবল ধুলো জমেছে। ছেলের গায়ের গন্ধ মিশে থাকা একটা পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকবেন। চোখের জল আটকে রাখার চেষ্টা করবেন, কিন্তু শূন্যতা যেন ছাড়তে চাইবে না। কষ্ট বুকে চেপে ঈদ কাটবে মায়ের।

শহীদ মামুন মিয়া তিতুমীর কলেজের একমাত্র শহীদ। তার আত্মত্যাগ কেবল তার পরিবারের নয়, পুরো আন্দোলনের স্মৃতিতে অমলিন। এই ঈদে মামুন মিয়া বাড়ি ফিরছে না, কিন্তু তার স্মৃতি ঠিকই ফিরে এসেছে। ঘরের দেয়ালে, আলমারির আয়নায়, ঈদের নতুন জামার ব্যাগে, বাবার ক্লান্ত চোখে, ভাইয়ের বিষণ্নতায় আর মায়ের বুকের গভীর শূন্যতায়।

সারাবাংলা/এমআর/এসএইচএস

শহীদ মামুন মিয়া