ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত দিনাজপুর গোর-এ শহিদ ময়দান
৩০ মার্চ ২০২৫ ১১:২৩ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ১৩:৫৯
দিনাজপুর: দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মিনার দিনাজপুর গোর-এ শহিদ ময়দান কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ।
সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিন সকাল ৯টায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে। ঈদের নামাজের জামাতে অংশ নিতে দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা এই ঈদের নামাজে অংশ গ্রহণ করে থাকেন। এ বছরও এক সঙ্গে লক্ষাধিক মুসল্লি এই ময়দানে নামাজ আদায় করবেন।
ঐতিহাসিক গোর-এ শহিদ বড় ময়দানে ঈদের জামাত ইমামতি করবেন হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান। সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা।
সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মিনারে সংস্কার কাজ, রং করা, ধোয়া মুছা, মাঠে মাটি ভরাট, শতাধিক মাইক টানানো, ওয়াস টাওয়ার, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, ওজু খানা, অস্থায়ী টয়লেট, ১৭টি প্রবেশ গেটসহ আনুসাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
দিনাজপুর পৌর প্রশাসক রিয়াজুল ইসলাম জানান, মাঠের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার। মাঠের আরেকটি অংশে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের গ্যারেজ। এছাড়াও পাশের স্টেশন ক্লাব, সার্কিট হাউজ, শিশু একাডেমি ও জেলা গণগ্রন্থাগার বড় ও বড় শহিদ ময়দানের একাংশ মাঠে হালকা যানবাহন পার্কিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠে প্রবেশের জন্য মাঠের চারিপাশে তৈরি করা হচ্ছে ১৭টি তোরণ।
তিনি জানান, শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে এবং মিনারে যাওয়ার রাস্তাতে তৈরি হচ্ছে তোরণ। মুসল্লিদের জন্য মাঠে ওযুখানা, ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি রয়েছে জেনারেটের ব্যবস্থা। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় র্যাবের জন্য তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ মাচাং নির্মাণসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ঈদগাহের মিনারের সংস্কার ও মাঠের পরিচর্যার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য এই ঈদগাহ মাঠে আসবেন ।
দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন মারুফ জানান, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে গোর-এ শহিদ বড় ময়দানে ঈদের জামাতকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন থাকবে। ঈদগাহের চার পাশে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঈদগাহ প্রাঙ্গণে সক্রিয় থাকবেন সাদা পোশাকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ ছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য নির্মিত হয়েছে চারটি বড় পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে শহরজুড়ে। যাতে করে দূর দূরান্ত থেকে আসা যানবাহন গুলো শহরে প্রবেশ করতে ও বের হতে কোনো সমস্যা না হয়। সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই ঈদগা জামাতের নামাজ আদায়ের সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ময়দানে বড় কোনো মিম্বর ছিল না। ২০১৫ সালে মিনারটি তৈরি হয়েছে মোগল স্থাপত্যরীতিতে। এর মেহরাবের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ৫২ গম্বুজ বিশিষ্ট ঈদগাহ মিনার রয়েছে। দুই প্রান্তে দুটি মিনারের উচ্চতা ৬০ ফুট। মাঝখানের দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট। আর টাইলস করা মেহরাবের উচ্চতা ৪৭ ফুট। এতে খিলান রয়েছে ৩২টি। প্রতিটি গম্বুজে আছে বৈদ্যুতিক বাতি। মসজিদে নববি, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্থাপনার আদলে তৈরি মিনারটির নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছিল প্রায় চার কোটি টাকা।
সারাবাংলা/ইআ