দর্শনার্থীর অপেক্ষায় ফয়’স লেক-চিড়িয়াখানা
৩০ মার্চ ২০২৫ ১২:৪০ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ১৩:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে টানা বন্ধে বিপুল দর্শনার্থী সমাগমের অপেক্ষায় আছে বন্দরনগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো। চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিবছর যে কয়েকটি বিনোদন স্পটে বিপুল জনসমাগম ঘটে, তার মধ্যে ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, চিড়িয়াখানা, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, পারকি সমুদ্র সৈকত অন্যতম।
দর্শনার্থীদের সাদরে বরণের সব প্রস্তুতি নিয়েছে ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। সংস্কারের নতুন রঙে রঙিন হয়েছে বিনোদন স্পটগুলো।
পাহাড়ঘেরা ৩৩৬ একরের ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে এবার অন্তঃত ৫০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগমের আশা করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের আঁকাবাঁকা লেক, ওয়াটার পার্ক সী-ওয়াল্র্ড, ফয়’সলেক রিসোর্ট, বেস ক্যাম্পসহ বেড়ানোর নানা অনুষঙ্গ আছে এ পার্কে।
পার্কের কর্মকর্তারা জানান, পার্কে বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শিপ, ফেরিস হুইলসহ আরো অনেক রাইড প্রস্তুত করা হয়েছে। শিশু কিশোরদের জন্য আছে হ্যাপি জাম্প, পনি এডভেঞ্চার, বেবি ড্রাগন, সার্কাস ট্রেন, বাম্পার বোটসের মতো রাইডস। এছাড়া নতুন ছয়টি রাইড স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হল- স্কাই হুপার মিডি ড্যান্স, কিডল হুইলস, কিডল টাওয়ার, এয়ারবোন শট ও ফ্লাইং বাস।

চিড়িয়াখানার খাঁচাসহ সব স্থাপনা ধুয়েমুছে নতুনভাবে রঙ করা হয়েছে। ছবি: সারাবাংলা
অ্যামিউজমেন্ট পার্কের রাইড শিশু-কিশোরদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এবার সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফেরিস ফয়’স লেকের বোটস্টেশন থেকে ইঞ্জিন বোটে দশ মিনিটের পথ পেরোলেই দেখা মিলবে জলের রাজ্যে রোমাঞ্চকর ওয়াটার পার্ক সী-ওর্য়াল্ড। এখানে আছে বিভিন্ন রকমের ওয়াটার রাইডস, যেমন- ওয়েভ পুল, মাল্টি স্লাইড, ড্যানসিং জোন। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই ওয়াটার পার্ক সী ওর্য়াল্ডে থাকছে ডিজে শো , ডান্স শো, ম্যাজিক শো।
ওয়াটার পার্ক সী ওর্য়াল্ডের পাশেই বিশ্রামের জন্য আছে ফয়’স লেক রিসোর্ট, যার দেশি-বিদেশি খাবারের স্বাদের জুড়ি মেলা ভার।
এরপর আছে লেকের ধারে পাহাড় চূড়ায় বেসক্যাম্প। এখানে খোলা আকাশের নিচে আর্চারি, ক্লাইম্বিং ওয়াল, ট্রি-টপ একটিভিটি কিংবা বিশাল ফয়’স লেক-এ কায়াকিং বা বোট রাইড যে কোন দর্শনার্থীর জন্য খুবই আকর্ষণীয়।
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক পরিচালনাকারী কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে পার্ক খুলে দেয়া হবে। ঈদের দিন থেকে টানা দশদিন উৎসব চলবে। গেম-শো, মিউজিক শো এবং ম্যাজিক শোসহ বেশ কিছু ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত হবে ডিজে শো। বাংলো এবং রিসোর্টগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, ঈদের পরদিন থেকে পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ হাজার করে ট্যুরিস্ট আসবে। প্রতিবছর অন্তঃত ১০ দিন লোকজন আসে। ৫০ হাজারের মতো দর্শনার্থী আসবে বলে আমাদের ধারণা।’

ছবি: সারাবাংলা
ফয়’সলেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের পাশেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। ঈদের দিনগুলোতে সেখানেও হাজার-হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এবার ঈদ ঘিরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে মনে করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানার খাঁচাসহ সব স্থাপনা ধুয়েমুছে নতুনভাবে রঙ করা হয়েছে। পুরো চিড়িয়াখানা সিসি ক্যামেরায় মোড়ানো হয়েছে। ২০ জন অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মতে, এবার দর্শনার্থীদের জন্য মূল আকর্ষণ হবে ১৮টি বাঘ ও এক জোড়া সিংহ।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার দর্শনার্থীর সমাগম ৬০ থেকে ৭০ হাজারের মতো হবে বলে ধারণা করছি। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী আরও চার-পাঁচদিন সমাগম থাকবে।’
বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৬৮ প্রজাতির ৫২০টি প্রাণি আছে, যার মধ্যে ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ এবং ৩৮ প্রজাতির পাখি। স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে আছে- রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় সিংহ, এশীয় কালো ভালুক, আফ্রিকান জেব্রা, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, সাম্বার হরিণ, প্যারা হরিণ, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, রেসাস বানর, উল্টো লেজি বানর, মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, চিতা বিড়াল, গন্ধগোকুল (হিমালিয়ান), বাঘডাস, গয়াল, খরগোশ, সজারু, শিয়াল। পাখির মধ্যে তিতির, ময়ূর, রাজ ধনেশ, কাক ধনেশ, শকুন, মদনটাক, সাদা বক, নিশি বক, তিলাঘুঘু, ভুবন চিল, কোকিল, ময়না, খঞ্জনা পাখি, তার্কি মুরগি আছে।
এছাড়া মিনি এভিয়ারিতে ৩৭-৩৮ প্রজাতির চারশ’র বেশি দেশি-বিদেশি পাখি আছে। এগুলো হল- লাভ বার্ড, লাফিং ডাভ, ফিজেন্ট কবুতর, রিং নেড প্যারোট, ককাটেল এবং ম্যাকাও। চিড়িয়াখানায় সরীসৃপের মধ্যে আছে- অজগর, মিঠাপানির কুমির ও কচ্ছপ।
উন্মুক্ত বিনোদন স্পটের মধ্যে পতেঙ্গা ও পারকি সমুদ্র সৈকতে হাজার-হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের ফ্লাওয়ার পার্ক, নগরীর পতেঙ্গায় বাটারফ্লাই পার্ক, কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট, নেভাল-টু, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা পার্ক, আগ্রাবাদে কর্ণফুলী শিশু পার্ক, হালিশহর ও সীতাকুণ্ডে গুলিয়াখালী সাগরতীর, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, ফটিকছড়ি চা বাগানেও প্রতিবছর লোকসমাগম হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম সোনিয়া সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ঈদের বন্ধে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম বিবেচনায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে সিএমপি। বিশেষ করে উন্মুক্ত স্থানগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ