Tuesday 01 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০ বছরে এমন স্বস্তির ঈদযাত্রা দেখেনি কেউ

উজ্জল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ মার্চ ২০২৫ ১৭:১০ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ১৭:২২

ঈদযাত্রা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বাংলাদেশে গত ২০ বছরে এবারের মতো এমন স্বস্তির ঈদযাত্রা দেখেনি কেউ- এমনটাই জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানো যাত্রীরা। তাদের কেউ ট্রেনে, কেউ বাসে, কেউ লঞ্চে, আবার কেউ মোটরসাইকেলে চেপে গ্রামের বাড়িতে ঈদের ছুটিতে যায়। যাত্রীদের তথ্যমতে, এবার ঈদযাত্রা ছিল অত্যন্ত স্বস্তির, আরামদায়ক ও ঝামেলাহীন। কোনোপ্রকার ঝামেলা ছাড়াই খুব অল্প সময়ে যাত্রীরা বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল রানা মোটরসাইকেল নিয়ে নাটোরে গেছেন ২৯ মার্চ বিকেলে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, “১০ বছর ধরে ঢাকা থেকে গ্রামে আসি। এর মধ্যে ৭ বছর ধরে আসি মোটসাইকেল নিয়ে। পথে যানজটে পড়ে থাকতে হতো দীর্ঘ সময়। পুলিশের হয়রানিও ছিল ব্যাপকহারে। সব মিলিয়ে ক্লান্তি ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাসায় ঈদ করতে হতো। কিন্তু এবার এর কিছুই হয়নি। তিন ঘণ্টায় নাটোর চলে এসেছি। কোথাও পুলিশ সিগন্যাল দেয়নি। সড়কে অনেক গাড়ি ছিল, কিন্তু যানজট ছিল না। পুরো সড়ক জুড়ে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। কোথাও চাঁদাবাজি চোখে পড়েনি। এক কথায় বলতে হবে এবার ঈদ হবে ‘স্বস্তির ঈদ’।”

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাতে বাসে লালমনিরহাট গেছেন আরিফুর রহমান। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বাস ১০টায় ছেড়ে রংপুর সাত মাথায় এসেছে সেহরির সময়। এর পর ফজরের আজানের সময় লালমনিরহাট পৌঁছাই। অথচ এর আগের ঈদ যাত্রাগুলোতে কখনোই বিকেলের আগে পৌঁছাতে পারতাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে বাস ছাড়ার পর চন্দ্রা পর্যন্ত আসতেই সকাল হয়ে যেত, যেটি এবার ঘটেনি। সাভার, নবীনগর, বাইপাইল ও চন্দ্রায় এবার কোনো যানজট ছিল না। পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা সড়কে ডিউটিতে ছিলেন। ফলে কোনো বাস দাঁড়াতে সাহস পায়নি। ফলে স্বস্তির ঈদযাত্রা ছিল এবার। এ ছাড়া, দীর্ঘ ছুটির কারণেও কিছুটা স্বস্তি এসেছে।’

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়ি গেছেন বদরুল ইসলাম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এবার ট্রেনের টিকিট কাটতে যেমন ঝামেলা ছিল না, তেমনি আসতেও কোনো সমস্যা হয়নি। পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দেই আসতে পেরেছি। এর আগের বছরগুলোতে টিকিট কাটতেই যুদ্ধ করতে হতো। টিকিট পেলেও ট্রেনে ওঠা নিয়ে ছিল আরেক যুদ্ধ। অনেকে উঠতেই পারতো না। ট্রেনে কষ্ট করে উঠলেও বসার জায়গা ছিল না। নিজের সিটেও অন্যজন বসে ছিল কারণ যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু এবার কোনো সমস্যাই ছিল না। তাই বলব, এবার ছিল স্বস্তির ঈদযাত্রা।’

জানা গেছে, রোজার শুরুতেই ঈদযাত্রা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করে এবং বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়। সড়ক জুড়ে সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করতে দেখা যায়। ফলে এবারের ঈদযাত্রা ছিল নজিরবিহীন স্বস্তির।

এবার ঈদযাত্রায় তেমন কোনো বড় দুর্ঘটনাও ঘটেনি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় সদর দফতর। ফলে বিগত বছরগুলোতে ঈদযাত্রায় যে মৃত্যুর মিছিল যোগ হতো তা এবার ঘটেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সড়কে অনেক বেশি সতর্কাবস্থায় থাকায় এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

এদিকে বাসের টিকিটেও এবার বেশি ভাড়া নিতে পারেনি বলেও জানিয়েছে যাত্রীরা। কোনো কোনো বাস কোম্পানি বেশি ভাড়া নিলেও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে লঞ্চেও ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা ছাড়াই লঞ্চগুলো ঈদের যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে গেছে।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

২০ বছর আরামদায়ক ঝামেলাহীন স্বস্তির ঈদযাত্রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর