Tuesday 01 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ মার্চ ২০২৫ ১৮:৪৪ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৫ ০৪:৪৩

ঈদুল ফিতর। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে দেশে আগামীকাল সোমবার (৩১ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হবে।

রোববার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

পরে চাঁদ দেখা কমিটি জানায়, বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একই ভৌগোলিক অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও আগামীকাল সোমবার ঈদুল ফিতর পালিত হবে।

উল্লেখ্য, এক মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করে থাকে। এটি ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতিও এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদের প্রধান জামাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ইমাম এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারি বিকল্প ইমাম এবং বাংলাদেশ বেতারের বিশিষ্ট ক্বারী এমদাদুল ইসলাম বিকল্প মোকাব্বির হিসেবে প্রস্তুত থাকবেন। ইমাম বা মোকাব্বিরের অনুপস্থিতিতে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

বিজ্ঞাপন

বৈরি আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সকল আয়োজন এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২৯ মার্চ) সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

তিনি জানান, জাতীয় ঈদগাহে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য নামাজের স্থান প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদের জামাতে অংশ নেবেন।

শাহজাহান মিয়া জানান, আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৯টায় ঈদের দ্বিতীয় জামাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঢাকাবাসীকে প্রধান ঈদ জামাতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছি, যাতে মুসল্লিরা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য দুটি এবং নির্বিঘ্নে বাহির হওয়ার জন্য পাঁচটি গেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও নারীদের প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি গেট থাকবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীতে নির্বিঘ্ন চলাচল ও সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ বছর ঢাকা মহানগরীতে ১১১টি ঈদগাহে ও ১ হাজার ৫৭৭টি মসজিদসহ মোট ১ হাজার ৭৩৯টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় ঈদগাহ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও ঢাকার অন্যান্য সকল স্থানে অনুষ্ঠেয় ঈদ জামাতের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে, পুরো জাতীয় ঈদগাহ মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকবে ডিএমপির বম্ব স্কোয়াড, সোয়াট ও ক্যানাইন (কে-৯) ইউনিট।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে শুক্রবার থেকে টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হবে। ঈদুল ফিতরের আগের রাতে সরকারি ভবনগুলোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

সারাদেশে বিভাগ বা জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলো যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে।

ঈদ উদযাপন উপলক্ষ্যে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, দুঃস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশন যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। এ উপলক্ষ্যে সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সকল শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনাটিকেটে যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে-সকাল ৭টায়, এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং শেষ ঈদ জামাত পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের বাণিজ্য মেলার পুরনো মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রস্তুতি শেষ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সকাল সাড়ে ৮টায় এই মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নারীদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। ডিএনসিসির উদ্যোগে ঢাকা উত্তরের প্রধান ঈদের জামাত এটি। ঈদের জামাতের পর থাকছে ঈদ আনন্দ মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঈদ মেলা।

ঈদের জামাতের জন্য পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্যান্ডেলের বাইরেও নামাজ আদায়ের জন্য থাকবে কার্পেট ও নামাজের বিছানা। প্যান্ডেলের ভেতরে দক্ষিণ পাশে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।

মাঠের প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এবারের ঈদ জামাত ও ঈদ মিছিলে লাখো মানুষ সমাগমের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ঈদ জামাতে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি ওজুর ব্যবস্থা, পানি পানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই মাঠে একসাথে লক্ষাধিক মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের অনেক উপদেষ্টা এই মাঠে ঈদ জামাতে অংশ গ্রহণ করবেন। নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী গত একসপ্তাহ ধরে কাজ করছে। সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো এলাকা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।’

ঈদের আনন্দ মিছিলটি ইতিহাসের একটি অংশ হবে উল্লেখ করে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘এই প্রথম এত বড় পরিসরে ঈদ আনন্দ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এটি ইতিহাসের একটি অংশ হবে। আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইতিহাসের অংশ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

এ ছাড়া, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসাবে এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম জামাত। সকাল ১০টায় শুরু হবে। এতে ইমামতি করবেন ১৫ বছর আগে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। মুসল্লিদের জন্য থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মুসল্লি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

মাঠে একসঙ্গে তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করে থাকেন। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। মুসল্লিদের বিশ্বাস, বড় জামাতে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এমন বিশ্বাস থেকে ঈদের দিন মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। পুরো এলাকা জমসমুদ্রে পরিণত হয়। শোলাকিয়ার ঈদ জামাত সবার কাছে বাড়তি আনন্দ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

ঈদুল ফিতর চাঁদ শাওয়াল