খুলনায় প্রস্তুত ঈদগাহ, ৮টায় প্রধান জামাত
৩০ মার্চ ২০২৫ ২১:০৫
খুলনা: যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে খুলনায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮ টায় সার্কিট হাউজ ময়দানে। ইতোমধ্যে মাঠের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে খুলনা টাউন জামে মসজিদে প্রথম জামাত সকাল ৮ টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯ টায় এবং তৃতীয় জামাত সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) কেন্দ্রীয় মাঠে প্রথমবারের মতো পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতটি খুলনার সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত হবে বলে ধারণা হচ্ছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এ পবিত্র ঈদুল ফিতর এর জামাত সকাল সাড়ে ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮ টায় খুলনা আলিয়া মারদাসা সংলগ্ন মডেল মসজিদে এবং সকাল ৯ টায় খুলনা টাউন জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া নগরীর দৌলতপুর এলাকার সরকারি বি.এল কলেজ মাঠে সকাল ৮ টায়, মুজগুন্নি আবাসিকের বায়তুন নাজাত জামে মসজিদে সকাল ৮ টায়, মহেশ্বরপাশা সাড়াডাঙ্গা মাঠে ৮ টায়, পাবলা সবুজ সংঘ ঈদগাহ্ সকাল ৮ টায়, দৌলতপুর আঞ্জুমান কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ সকাল ৮ টায়, দৌলতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সকাল ৭ টায়, দৌলতপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চত্বরে সকাল সাড়ে ৭ টায়, দেয়ানা উত্তরপাড়া ঈদগাহ্ সকাল ৮ টায়, দেয়ানা দক্ষিণপাড়া ঈদগাহ্ সকাল সাড়ে ৮ টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার (৩০ মার্চ) খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার সার্কিট হাউজ মাঠে আসন্ন ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে বিভাগীয় কমিশনার ও কেসিসি’র প্রশাসক গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, নগরবাসী যাতে সুষ্ঠুভাবে ঈদের প্রধান জামাতে নামাজ আদায় করতে পারে সে জন্য সার্কিট হাউজ মাঠ প্রস্তুতের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১২টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। নগরবাসী স্বচ্ছন্দে ও নিরাপত্তার সঙ্গে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ এবং পবিত্র ঈদ উদযাপন করতে পারবে বলে আশা করা যায়। সে লক্ষ্যে খুলনা সিটি করপোরেশন ও কেএমপি’র পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে কেসিসি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহায়তায় পৃথকভাবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঈদ জামাতের আয়োজন করা হচ্ছে।
পরে সার্কিট হাউজ মাঠে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সার্বিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়াবালী নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করেন কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এ্যাডমিন ও ফিন্যান্স) আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ।
পরিদর্শনকালে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মন্ডল, কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মশিউজ্জামান খান, সিনিয়র সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম, জেলা প্রশাসন, কেএমপি, কেসিসি’র কর্মকর্তাসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ঈদের দিন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবনে যথাযথভাবে সঠিক রঙ ও মাপের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা এবং সূর্যাস্তের পূর্বে নামানো হবে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো ও গুরুত্বপূর্ণ চত্বর, সড়কদ্বীপ ও সার্কিট হাউস ময়দান জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক (বাংলা ও আরবী) খচিত ব্যানার দিয়ে সজ্জিত করা হবে। বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে এ উপলক্ষে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।
ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সুবিধামত সময়ে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। সুবিধাজনক সময়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং জেলা শিশু একাডেমির আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিশু আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হবে। ঈদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মহানগর ও মহানগরের বাইরের বিভিন্ন স্পটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঈদুল ফিতরের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, রাস্তা বন্ধ করে স্টল তৈরি, উচ্চস্বরে মাইক/ ড্রাম বাজানো, রঙিন পানি ছিটানো এবং বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না।
ঈদের সময় নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিতকল্পে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত নৌ পথে বালুবাহী নৌ যান চলাচল বন্ধ এবং রাতের বেলায় স্পীডবোট চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের দিন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং সড়কে খোলা পিকআপ/ট্রাকে উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে কেউ যেন উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি না করতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ইভটিজার ও বখাটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেসিসি’র প্রশাসক আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে রাস্তায় যত্রতত্র গেইট নির্মাণ, প্যানা বা ব্যানার টাঙালে রাস্তা সংকুচিত হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে এবং শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। এজন্য গেইট নির্মাণ, প্যানা বা ব্যানার টাঙানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। ঈদের সময় অজ্ঞান ও মলম পার্টি, ছিনতাইকারী ও পকেটমারদের তৎপরতা বন্ধে টার্মিনাল সংযোগ সড়ক, রেলস্টেশন, বাস ও নৌযান টার্মিনালসমূহে সাদা পোষকধারী পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
এ ছাড়া জাল টাকার বিস্তাররোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ঈদের ছুটিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান/বাজার/মার্কেট/অফিস/শপিংমলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সকল প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালনের জন্য নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করবে। সকল প্রকার যানবাহন বিশেষ করে বাস/মিনিবাসে অতিরিক্ত যাত্রী ও বাসের ছাদে বা হাতলে ঝুলে কোন যাত্রী বহন করা যাবে না। দৌলতপুর খেয়াঘাট, জেলখানা ঘাট ও রূপসাঘাট-সহ সকল লঞ্চ, খেয়া ও ফেরী ঘাটে অতিরিক্ত টোল/ভাড়া আদায় করা যাবে না এবং লঞ্চ/নৌকা/ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। এ সকল ঘাটে ভিজিলেন্স টিম ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সময় মুসল্লীদের গাড়ি পার্কিং এর জন্য খুলনা জেলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়াম সংরক্ষিত থাকবে। মুসল্লীদের অযুর জন্য পানির ব্যবস্থা রাখা হবে। বাস, লঞ্চ, স্টিমারে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী উঠতে না পারে এবং বেপরোয়াভাবে যান চলাচল করতে না পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। জেলার শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নের কোনো সংবাদ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে র্যাবের কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৭৭৭৭১০৬৯৯-এ জাননো যাবে। যাকাতের একটি অংশ সরকারি যাকাত ফান্ডে প্রদানের জন্য সোনালী ব্যাংক, খুলনা করপোরেট শাখা, চলতি হিসাব নম্বর-৩৩০০০৮৩৫; ইসলামী ব্যাংক, খুলনা শাখা, চলতি হিসাব নম্বর-২১৫ এবং জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখা, চলতি হিসাব নম্বর-৩৩০০৭৫৭ অথবা উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বয়রা, খুলনা-এর নিকট সরাসরি প্রদান করা যাবে।
বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার ও স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। উপজেলাগুলোতেও স্থানীয়ভাবে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।
সারাবাংলা/এইচআই