Wednesday 02 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাসপাতালের বেডেই কাটল জুলাই যোদ্ধাদের ঈদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫৬ | আপডেট: ১ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:২৪

অসুস্থ শরীর নিয়ে হাসপাতালের বিছানাতেই কাটছে জুলাই যোদ্ধাদের ঈদ। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন পোশাক পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ জামাতে অংশ নেওয়া, এরপর মা-বোন কিংবা স্ত্রীর হাতের রান্না খেয়ে ঘুরে বেড়ানো। এই আনন্দ নেই এবার জুলাই আন্দোলনে আহত যোদ্ধাদের। অসুস্থ শরীর নিয়ে হাসপাতালের বিছানাতেই কাটছে অনেকের ঈদ।

এদিন হাসপাতাল থেকে সকালে ও দুপুরে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবির ও বিএনপির পক্ষ থেকেও হাসপাতালে জুলাইয়ের আহত যোদ্ধাদের জন্য খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর) ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বেডই ফাঁকা। গুরুতর আহত ছাড়া অনেকেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়িতে গেছেন। এখানেই কথা হয় শামীম আহমেদের সঙ্গে। পেশায় গার্মেন্টসকর্মী শামীম সারাবাংলাকে জানান, ৫ আগস্ট গাজীপুরের মাওনা এলাকায় পায়ে গুলি লাগে তার। এর পর থেকে এই হাসপাতাল, সেই হাসপাতাল ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোথাও সুচিকিৎসা না পেয়ে মাস খানেক আগে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখানে অপারেশন করে পায়ের তিন ইঞ্চি হাড় কেটে ফেলা হয়েছে তার।

তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা বাড়িতে। বাবা-মা বাড়িতে। সবাই কান্নাকাটি করছেন। স্ত্রী এসেছেন কিছু রান্না করে নিয়ে। এত খারাপ সময় কোনো দিন যায়নি। এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। আমি সুস্থ হতে চাই কাজে ফিরতে চাই।’

আরেক যোদ্ধা মো. লিটন। পেশায় গাড়িচালক। ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের বন্দুকের আঘাতে পা ভেঙে যায়। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নিচ্ছেন এই হাসপাতালে। দুই দফা অপারেশন হয়েছে। আর কতদিন থাকতে হবে তিনি জানেন না। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন মা, বৌ-বাচ্চা এসেছে দেখতে। তাই ভালো লাগছে কিছুটা। কিন্তু সন্ধ্যা হলে তারা যখন চলে যাবে তখন কি করে থাকব?’

বিজ্ঞাপন
কোথাও সুচিকিৎসা না পেয়ে মাস খানেক আগে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গার্মেন্টসকর্মী শামীম। ছবি: সারাবাংলা

কোথাও সুচিকিৎসা না পেয়ে মাস খানেক আগে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গার্মেন্টসকর্মী শামীম। ছবি: সারাবাংলা

পাশের বেডেই চিকিৎসা নিচ্ছেন মো. হাসিব মোল্লা। বরিশাল হাতেম আলী কলেজের সদ্য অনার্স শেষ করা শিক্ষার্থী হাসিব সারাবাংলাকে জানান, চার ভাই ও মা-বাবাকে নিয়ে তাদের সংসার। ভাইদের মধ্যে তিনি মেজো। প্রতিবছর খুব ঘটা করে ঈদ উদযাপন করা হলেও এবার ঈদের সকাল হয়েছে মায়ের কান্নার শব্দ শুনে।

তিনি বলেন, ‘কি করব বলেন, আমার হাত এখনো ঠিক হয়নি। এই অবস্থায় হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া কঠিন। পরিবার ছেড়ে হাসপাতালে খারাপ লাগছে ঠিক, কিন্তু হাসপাতালে নার্স চিকিৎসকরাও কেয়ার করছেন। বিশেষ খাবার দিচ্ছেন, আবার ইউনিট প্রধান এসে সবার সঙ্গে দেখা করে গেছেন। এভাবেই কেটেছে ঈদের দিন।’

জানা যায়, হাসপাতালের পাশাপাশি দুপুরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জুলাই যোদ্ধাদের খাবার দিয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকেও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫০ জন জুলাই যোদ্ধার মধ্যে ঈদের সময়ে ৩০ জনের মতো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকিরা ফিরে আসার শর্তে নিজে দায়িত্ব নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গেছেন।

এই ওয়ার্ডের নার্স তন্বী সারাবাংলাকে জানান, অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন। যারা আছেন, তাদের জন্য প্রতিবছরের ঈদের দিনের মতো এবারও ভালো আয়োজন ছিল। তবে ঈদের ছুটিতে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে না।

এদিকে হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোতেও রোগির সংখ্যা কম দেখা গেছে। একটি পুরুষ ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স শিউলি সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কম। তবে চিকিৎসার ঘাটতি নেই। ঈদের দিনগুলোতে ডিউটির জন্য বিশেষ রোস্টার করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা ডিউটি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসার কোনো ঘাটতি নেই এখানে।’

এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা দেখা গেল। সেখানে বেশ ভিড়। বেশিরভাগই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী। একটু পর পরই হাত-পা কাটা-ছেঁড়া, ভাঙা রোগী রক্তাক্ত অবস্থায় আসছেন। আর তাদের সেবা দিতে ব্যস্ত জরুরি বিভাগের নার্স-চিকিৎসকরা। যেন কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

জুলাই যোদ্ধা টপ নিউজ হাসপাতাল বেড