Wednesday 02 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদের আনন্দে মানুষ ছুটছে বিনোদন কেন্দ্রে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:১০ | আপডেট: ১ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:২৯

বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে রীতিমতো মানুষের ঢল নেমেছে। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চৈত্রের সকাল থেকেই আছে সূর্যের চোখ রাঙানি। তাপদাহ জনজীবনে কিছুটা অস্বস্ত্বিও এনেছে। কিন্তু তাতে কী, বছর ঘুরে আসা ঈদুল ফিতরের আনন্দ তাতে বাধা হতে পারে না একটুও! তাই ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকেই বন্দরনগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে উপচে পড়া ভিড়। আনন্দে উদ্বেল সকলে, বিশেষ শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো।

প্রতিবছর ঈদের সময় চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা তো আছেনই, আশপাশের উপজেলা-জেলা কিংবা দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ ছুটে আসেন এ বন্দরনগরীতে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়, পারিবারিক আবহে স্বজনদের সঙ্গে সম্মিলন, নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন অনেকে। তবে বিকেলে অনেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়’সলেক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে যান।

এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে রীতিমতো মানুষের ঢল নেমেছে।

ঈদ বিনোদনে চট্টগ্রামের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। ঈদের দ্বিতীয় দিনে সকাল ৮টায় ফটক খোলার পর দুপুর ২টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় অন্তত ছয় হাজার মানুষ প্রবেশ করেছে। দিনভর হাজার, হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পশুপাখিদের বিশাল আবাসটি।

চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেছেন দর্শনার্থীরা। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিন ১৪ হাজার ৬০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। আজ দুপুর ২টার মধ্যে ছয় হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেছেন। সন্ধ্যা ৬টায় গেট বন্ধ করবো। এর মধ্যে ১৫ হাজার পার হয়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা জানালেন, পাঁচটি বিরল সাদা বাঘ চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ। মোট ১৮টি বাঘ, এক জোড়া সিংহ, জলহস্তীর খাঁচার সামনে দর্শনার্থীরা বেশি ভিড় জমাচ্ছেন।

ডেপুটি কিউরেটর শুভ বলেন, ‘এবার ব্যাপক দর্শনার্থী হবে, এটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুরো চিড়িয়াখানা সিসি ক্যামেরায় মোড়ানো হয়েছে।’

আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা তারেকুল হাবীব সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকালে পারকি বীচে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে চিড়িয়াখানায় এসেছি। বাচ্চাদের বেশি আগ্রহ চিড়িয়াখানার প্রতি।’

ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে দর্শনার্থীর সমাগম। ছবি: সারাবাংলা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত পতেঙ্গা, টানেলের প্রবেশমুখ, মেরিন ড্রাইভ, আউটার রিং রোডসহ আশপাশের স্পটে সকাল থেকেই শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী লোকজনের সমাগম শুরু হয়। সৈকতে বসে গলা ছেড়ে গান গাওয়া, গরম পিঁয়াজু-কাঁকড়া ভাজি, ডাব, আনন্দের কমতি নেই !

প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেল কিংবা গণপরিবহন, যে যেভাবে পেরেছেন, মূল শহর থেকে দূরের এসব বিনোদন স্পটে গেছেন। দুপুর গড়াতেই ভিড় আরও বাড়তে থাকে। ঈদের দিন বিকেলেও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

চট্টগ্রামে ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় চিড়িয়াখানা ও ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে। দুটি পাশাপাশি বিনোদন স্পট।

পাহাড় ও হ্রদবেস্টিত

৩৩৬ একরের ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে দর্শনার্থীর সমাগম শুরু হয়েছে ঈদের দিন বিকেল থেকেই। তবে শুরুর দিন কিছুটা কম থাকলেও দ্বিতীয় দিনে এসে রীতিমতো উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়েছে।

পাহাড়ের বুক চিড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের আঁকাবাঁকা লেক, ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডের কৃত্রিম সমুদ্র, বেসক্যাম্প, অ্যামিউজমেন্ট পার্কের রাইড- সবখানেই মুখর। তবে সবচেয়ে বেশি সমাগম হয়েছে কৃত্রিম সমুদ্রে, যেখানে হাজারো নারী, পুরুষ, শিশু আনন্দে মেতেছিলেন। ডিজে গানের সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের পানিতে দাপাদাপি, হইহুল্লোড়ে দিনভর অন্যরকম আবহ তৈরি হয়েছে।

ঈদের দ্বিতীয় দিনে এসে রীতিমতো উপচে পড়া ভিড়। ছবি: সারাবাংলা

অ্যামিউজমেন্ট পার্ক পরিচালনাকারী কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিন বিকেলে আমরা গেট খুলেছি। তাতেই সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারখানেক দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে। আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের মতো এসেছে। সন্ধ্যা নাগাদ ছয় হাজার পার হয়ে যাবে। চট্টগ্রামের লোকজন তো আছেই, ঢাকা-গাজীপুর থেকে পর্যন্ত লোকজন এসেছেন।’

আগামী শনিবার (৫ এপ্রিল) ঈদের ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত ফয়’সলেন এভাবেই মুখর থাকবে বলে জানালেন বিশ্বজিৎ ঘোষ।

বন্দরনগরীর উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে পারকি সমুদ্র সৈকত, মেরিড ড্রাইভ সড়কে জেলা প্রশাসনের ফ্লাওয়ার পার্ক, নগরীর পতেঙ্গায় বাটারফ্লাই পার্ক, কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট, নেভাল-টু, আগ্রাবাদে কর্ণফুলী শিশু পার্ক, হালিশহর ও সীতাকুণ্ডে গুলিয়াখালী সাগরতীর, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, ফটিকছড়ি চা বাগানেও গেছেন অনেক দর্শনার্থী। শাহ আমানত সেতু, সিআরবি এলাকায়ও দর্শনার্থীর আনাগোণা দেখা গেছে। এছাড়া নৌকায় চড়ে কর্ণফুলী ভ্রমণে বের হয়েছিলেন অনেকে।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

ঈদের আনন্দ চট্টগ্রাম বিনোদন কেন্দ্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর