এখনো সংস্কার হয়নি খোলপেটুয়ার বেড়িবাঁধ, পানিবন্দী ১৫ হাজার মানুষ
১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৫৪ | আপডেট: ২ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০৩
সাতক্ষীরা: ঈদুল ফিতরের দিন (৩১ মার্চ) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আট থেকে দশটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) বাঁধ ভাঙার দ্বিতীয় দিনও অতিবাহিত হলেও বিকল্প বাঁধ নির্মাণ কিংবা ভাঙন কবলিত অংশ সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মৎস্য ঘেরে লবণ পানি প্রবাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপন করায় বেড়িবাঁধের নিচের মাটি দুর্বল হয়ে ছিল। ফলে বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) আশাশুনি উপজেলা টিম লিডার আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা যখন নামাজরত অবস্থায় ছিলাম, তখন হঠাৎ শুনি যে বাঁধ ভেঙে গেছে। আমরা মোনাজাত না করেই ছুটে যাই। গ্রামবাসী মিলে অস্থায়ীভাবে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু দুপুরের জোয়ারের পর সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। মূল যে পয়েন্টটি ভেঙেছে, সেটাতে একটি পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম ছিল। যতগুলো ভাঙন পয়েন্ট রয়েছে, সবগুলোই পাইপলাইনের কারণে হয়েছে। এখন যদি আমরা এই পাইপলাইন বসানো বন্ধ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটবে।’
আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বাঁধ ভেঙে প্রবল জোয়ারের পানি গ্রামগুলোর চার হাজার বিঘা জমির ধান ও ২০০ বিঘার অধিক চিংড়ি ঘের তলিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া, প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বাড়িঘর পানির নিচে ডুবে গেছে।
আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করছি, সামনে আমাদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। কারণ মাত্র একদিনের ব্যবধানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। দুপুর ও রাতের জোয়ারের কারণে ভাঙন আরও গভীর হয়েছে। বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, ইউএনও, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু শুধুমাত্র উপস্থিত থাকলেই হবে না, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে বলগেট (বালু ও মাটি বহনের জাহাজ) প্রয়োজন। একটি বলগেট এসেছে, তবে এটি দিয়ে কতক্ষণ কাজ চালানো সম্ভব? আমরা আশা করছি, রাতারাতি আরও চারটি বলগেট আসবে, তারপর পুরোপুরি কাজ শুরু হবে। তবে এই ধরনের ভাঙন রোধ করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ছিল। কিন্তু গতকাল সেটার ১০০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৮ থেকে ১০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। আমি খবর পাওয়ার পর পরই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছি। তবে ঈদের কারণে শ্রমিক সংকট ও বালু বোর্ড আনতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সকালেই ঘটনাস্থলে এসে দেখেছি, পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারি, তাহলে পরবর্তী জোয়ারে আরও প্রায় আধা কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এরই মধ্যে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগকে একত্রে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা আমাদের সহযোগিতা করছেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছি।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে অবৈধ পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম অন্যতম কারণ। তারা অবিলম্বে এই পদ্ধতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও স্থানীয়রা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোরালো দাবি তুলেছেন। ভাঙন প্রতিরোধে অবিলম্বে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া না হলে, সাতক্ষীরার এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সারাবাংলা/পিটিএম