স্বস্তি ফিরলেও শঙ্কা কাটেনি বিএনপির
১ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৫২
ঢাকা: ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর কিছুটা স্বাস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও ভোটের রাজনীতি নিয়ে এখনো শঙ্কায় বিএনপি। এই শঙ্কা দূর করার শর্টকাট কোনো পথও খুঁজে পাচ্ছে না দলটি। দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে এপ্রিল থেকে সমমনাদের নিয়ে ছোট ছোট কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে তারা। কারণ, এই মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায় না দলটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ সরকার তো আমাদের প্রতিপক্ষ না। সরকারকে আমরা প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতেও চাই না। সে কারণে নির্বাচন ইস্যুতে আপাতত কোনো কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছি না। আমরা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব।’
ছাত্রদের কোটাবিরোধী অরাজনৈতিক আন্দোলন মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নিলে বিএনপি মনে করেছিল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষমত হবে তারা। কিন্তু, এখনো সে লক্ষ্য অর্জন হয়নি তাদের। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা এখনো অধরা। অধিকন্তু, নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করায় অনেকটা অন্ধকারে রয়েছেন বিএনপি নেতারা। সংস্কারের নামে কালক্ষেপণকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছেন দলটির নেতৃস্থানীয়রা। তৃণমূলেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একেকসময় একেকরকম বক্তব্য, অন্য উপদেষ্টাদের নেতিবাচক বক্তব্য-মন্তব্য বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলেছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করছেন, নির্বাচনের দাবিতে মাঠে না নামলে আগামী ১০ বছরেও ভোটের আয়োজন করবে না অন্তর্বর্তী সরকার।
এমন ধারণার পেছনে যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছিল, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন সময় দেওয়া ভাষণ-বক্তৃতায় এ কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ ছাড়া, ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছিলেন ‘আমরা ডিসেম্বরকে টার্গেট করে নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছি। ডিসেম্বর সামনে রেখে ভোট করতে গেলে এ বছরের জুলাই-আগস্ট থেকেই নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি থাকতে হবে কমিশনের।’
অবশ্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ডিসেম্বর মাসকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে হিসেবে উল্লেখ করলেও উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র প্রতিনিধি এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির বক্তব্য বরাবরই ছিল ভিন্নরকম। বিশেষ করে তিন ছাত্র উপদেষ্টা বরাবরই নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া দিনক্ষণের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছিলেন।
এরই মধ্যে গত ২০ মার্চ ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দু’টি সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের চেয়ে স্বল্প পরিসরে সংস্কার চায় সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। যদি বৃহত্তর আকারে সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’
এর চার দিন পর ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সবধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে আমি আশা করছি।’
দলীয় সূত্রমতে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্বাচন টেনে নেওয়ার বিষয়টি শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে বিএনপিকে। দলটির নীতিনির্ধরকরা মনে করছেন, এটা আর কিছু না, নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণমাত্র। কিন্তু, এই কালক্ষেপণের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো আন্দোলন বা অবস্থানের কথা এই মুহূর্তে ভাবতে পারছে না দলটি। কারণ, তারা ঠিক বুঝতে পারছে না কোথা থেকে কী হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে শতভাগ সমর্থন দেওয়ার পরও নির্বাচন ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না পেয়ে তারা অনেকটাই হতাশ এবং শঙ্কা বোধ করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার তো পরিষ্কার করে কিছু বলছে না। একেকসময় একেককথা বলছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আর এই ধোঁয়াশা তৈরির কাজটা কারা করছে, কেন করছে, সেটাও বুঝতে পারছি না। এতদিন আমরা চেনা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এখন এক অদৃশ্য শক্তি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম